জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে সংঘর্ষ, অবরোধ, বিক্ষোভ এবং মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি আসন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। কাজ করছে সাংগঠনিক টিমও। দলের সিদ্ধান্ত যে বা যারা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের অভিযোগে দল এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ইতিমধ্যে বহিষ্কারও করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অন্তত ১৯টি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, অবরোধ, বিক্ষোভ এবং মিছিল হয়েছে। প্রার্থিতা বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে ঘিরে এসব ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে মনে করছেন নেতারা। ওদিকে, ৬৩ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি বিএনপি। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ ছাড়া মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পাওয়া কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় মনোনয়ন স্থগিত করা হয়।
দলীয় প্রার্থী নিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ৩ নেতাদের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, কিছু আসনের মনোনয়ন দেয়া প্রার্থীদের নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুলছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের অভিযোগ আছে। সে কারণে নেতাকর্মীরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। দলের পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে এমনটাও মনে করছেন তারা।
বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে ৩ থেকে ৪ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কোনো কোনো আসনে ১০ থেকে ১২ জনও ছিলেন। এদের মধ্যে সবাই যোগ্য। তবে সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই করে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এজন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বিক্ষোভ ও মিছিল হচ্ছে। এটা ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি না বলে মনে করছেন তারা। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে কিছু কিছু আসনে ক্ষোভ অনেকটা নিরসন হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, দুই-একটি জায়গায় পছন্দের নেতা মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের কর্মী ও সমর্থকরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যারা মনোনয়ন পায়নি, তাদের সম্মান ও মূল্যায়ন করা হবে। তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সেটা ভবিষ্যৎ সময় বলে দেবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সেখানে কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটে। কিন্তু যারা এসব করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দিন থেকেই সংঘর্ষ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। রোববারও সারা দেশে বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে দীর্ঘ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৩ (গৌরিপুর) আসনে মনোনয়ন দ্বন্দ্বের জের ধরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, রোববার কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী সামিরা আজিমের (দোলা) গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালামের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন সামিরা আজিম। ওদিকে, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদের সমর্থকদের ওপর বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী ফারুক আলম সরকারের সমর্থকরা হামলা করার অভিযোগ উঠেছে।
কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই) আসনে বিএনপি থেকে আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেয়ায় রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি’র একাংশের নেতাকর্মীরা। এবিষয়ে মানবজমিনকে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, এখানে তিন গ্রুপ আছে। এরমধ্যে একটি গ্রুপ বিএনপি এবং আরেকটি যুবদল। নেশাগ্রস্ত কিছু ছেলেদের দিয়ে কমিটি দিয়েছে। কমিটির কারণে এদের লোক আছে। কমিটিতে তারা না থাকলে তাদের লোকও থাকবে না। সোমবারের (আজ) পর আর কোনো কিছু থাকবে না। দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে সাদিক রিয়াজকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মৌনমিছিল ও মানববন্ধন করেছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের অনুসারীরা। সাদিক রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, আমি ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছি। যোগ্য বলেই তো আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এবারো মাঠ জরিপ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে যোগ্য মনে করেই তো আবার প্রার্থিতা দিয়েছেন। বঞ্চিতদের সব সময় একটু মন খারাপ থাকে। এটাই স্বাভাবিক।