ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ধাপে ধাপে সব কাজ শেষ করে শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ। ইসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী ১৩ই নভেম্বর শুরু হবে সংলাপ। তবে ইসি’র আমন্ত্রণপত্র পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের রাজনৈতিক দলগুলো। সংস্থাটির উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে মানবজমিনকে। সূত্র জানায়, ইসি’র নিবন্ধন তালিকায় স্থগিত থাকা দল আওয়ামী লীগসহ তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে গত কয়েকটি নির্বাচনে অংশ নেয়া ও আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়া দলগুলোকে বাইরে রেখেই আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ইসি সূত্র বলছে, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আইন সংশোধন ও নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি ইসি। গত ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ কাজগুলো শেষ করার কথা ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ দু’টি কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও পিছিয়ে গেছে। ১৩ই নভেম্বর প্রথম দিনের সংলাপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে দুই দফায় ছয়টি করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে না বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইসি’র কোনো কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি।
সংলাপের বিষয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সংলাপের ব্যাপারে আমরা অপেক্ষায় আছি, যে আচরণ বিধিমালাটা, প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের আচরণ বিধিমালার গেজেটটা পেলেই আমরা সংলাপের সময়টা ঠিক করে নেবো।
আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন চায়, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং জনগণের আস্থা অর্জনকারী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্য কমিশন সংলাপকে একটি কার্যকর প্ল্যাটফরম হিসেবে বিবেচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের মতামতও নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংলাপে আচরণবিধির বাস্তব প্রয়োগ, প্রার্থীদের আচরণ, প্রচারণার নিয়ম, নির্বাচনী ব্যয় ও মিডিয়ার ভূমিকা-এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কমিশন চায় সংলাপ শেষে একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক আচরণবিধি কার্যকর করা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সবসময় সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে এগোতে চায়। আমরা চাই রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা নিয়ে অংশগ্রহণ করুক, যাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হয়।
ইসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, জাকের পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে সংলাপে না ডাকার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইসি জানায়, নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি সেশনে ৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকবেন। একদিনে দু’টি সেশনে ১২টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে ডাকার কথা আছে। ১৩ই নভেম্বর সংলাপ শুরু হলে সর্বশেষ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন।
যেমন ছিল দ্বাদশ নির্বাচনী সংলাপ:
২০২৩ সালের ১লা নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৪৪টি দলকে। তৎকালীন হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানায়। ৪ঠা নভেম্বর যথারীতি আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল সংলাপে অংশ নিলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তা প্রত্যাখ্যান করে। মোটাদাগে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত ও পরামর্শ ছাড়াই সে সময় নির্বাচনের পথে হাঁটে আউয়াল কমিশন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ বলেও আখ্যা দেয় তৎকালীন বিরোধী জোটগুলো। অবশ্য শেখ হাসিনা সে সময় ক্ষমতায় এলেও সাত মাসের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন।
ত্রয়োদশ ভোটের তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মোটামুটি সব কাজই গুছিয়ে নিয়েছে ইসি। ভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য দ্রুত উদ্যোগও নিচ্ছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যেসব কাজ বাকি, নভেম্বরের মধ্যে তা শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’ সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ হতে যাচ্ছে। বড় ধরনের সংশোধনীসহ খসড়া বিধিমালার এসআরও জারির জন্য গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। এ ছাড়া ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা’র সংশোধনীর খসড়া চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন ইসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আচরণ বিধিমালা এবং পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল’ চূড়ান্ত করবে ইসি। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের আয়োজন চলছে। গণভোট বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা না পাওয়ায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।