সিলেটে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কৌশল সাজাচ্ছে ইসলামী দলগুলো। মুখে একক প্রার্থীর কথা থাকলেও সমঝোতার দিকেই তাদের নজর বেশি। পর্দার আড়ালের আলোচনা বেশ তুঙ্গে। জাতীয় রাজনীতির আদলে দুইদিকে ঝুঁকছে সিলেটের ভোটের পলিসি। ইসলামী দলগুলো বিভক্ত হচ্ছে বিএনপি কিংবা জামায়াত বলয়ে। জামায়াত কী করবে-আপাতত সেটি পরিষ্কার নয়। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সিলেটে দু’দিনের সফর করে গেছেন। তিনি দিয়েছেন কিছু নির্দেশনা। তবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটে সব আসনেই জামায়াত জোর দেবে, কোনো কোনো আসনে একটু বেশি নজরদারি করবে। কয়েকটি আসনকে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী কৌশল সাজাচ্ছে। জেলার ৬টি আসনের মধ্যে সিলেট-১, সিলেট-৩, সিলেট-৪ ও সিলেট-৬ আসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল দলটি। সিলেট-৪ আসনে বিএনপি থেকে দুইবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার কারণে এ আসন নিয়ে দোলাচলে আছেন দলটির নেতারা। সিলেটের সবচেয়ে গুরুত্ব যে আসনে জামায়াত দিচ্ছে সেটি হচ্ছে সিলেট-৬ আসন। এ আসনে বিগত কয়েক নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন মাওলানা হাবিবুর রহমান। এবার তিনি এ আসনে প্রার্থী তালিকায় ছিলেন। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আসনে নতুন প্রার্থী ঘোষণা করা হয় ঢাকার উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিনকে। আর মাওলানা হাবিবুর রহমানকে নিয়ে আসা হয় সিলেট-১ আসনে। সিলেট-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এমএ মালিক প্রার্থী হওয়ায় জামায়াতের ভেতরে কিছুটা স্বস্তি। এ আসনে তাদের প্রার্থী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ। এই অবস্থায় জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে শরিকদের সমঝোতা হলে তিন থেকে চারটি আসন তারা শরিকদের ছেড়ে দিয়ে দুটি অথবা তিনটিতে জয়ের জন্য মাঠে নামতে পারে বলে দলের পক্ষ থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। খেলাফত মজলিস এবার জামায়াতে সঙ্গে আন্দোলনে শরিক আছে। সিলেট অঞ্চলে খেলাফত মজলিসের আমীর, মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কয়েকজনের বাড়ি।
খেলাফত মজলিসের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে দুটিতে তাদের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম মো. মুনতাসির আলী। সিলেট-৪ আসনে তুখোড় ওয়াজি ও তরুণ সমাজের কাছে জনপ্রিয় প্রার্থী মুফতি আলী হাসান উসামা। এ দুটি আসন ছাড়াও আরও দুটি আসনে জামায়াতের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের সমঝোতার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে খেলাফত নেতারা জানিয়েছেন। এখনো সে বিষয়ে তেমন কথাবার্তা না হলেও প্রার্থী বিবেচনায় সমঝোতার বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। খেলাফত মজলিসের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট অঞ্চলে তাদের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ কারণে তারা সমঝোতার পাশাপাশি একক নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রচারণায় রেখেছে। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে প্রার্থীরা তাদের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সাড়া ফেলছেন অনেকেই। জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় গেলে সিলেটে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরা এক বা একাধিক আসনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে সবার সমর্থন চাইবে। তবে ভোটের মাঠে দল দুটির প্রার্থীদের প্রচারণা খুবই কম। ইসলামী আন্দোলন সিলেট-৫ সহ আরও দুটি আসনে সমঝোতায় যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
বিএনপি’র সঙ্গে জোটের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে কথাবার্তা আছে জমিয়তে ইসলামকে নিয়ে। জমিয়তের পক্ষ থেকে এবার আকিদাগত বিরোধকে ভোটের মাঠে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে নানা বিষয় নিয়ে জামায়াত ও জমিয়তের মধ্যে কখনো দৃশ্যমান, আবার কখনো অদৃশ্যমান লড়াই চলছে। তবে দলটির নেতাদের মতে; তারা কোনো ভাবেই জামায়াতের জোটে যাবেন না। এজন্য বিএনপি’র সঙ্গে হয়তো ভোটের সমঝোতা হতে পারে। বিএনপি সিলেটের চারটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সিলেট-৪ আসনের হিসাব পরিষ্কার হয়েছে। এ আসনে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন দুইবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন- আরিফের নাম দলের তরফ থেকে যেকোনো সময় ঘোষণা হবে। ফলে আরিফুল হককে নিয়ে যে ধোঁয়াশা আছে সেটি কেটে যাবে। এ আসনটি এবার ছাড় দিতে চাইছে না জমিয়ত। আসনে তাদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী। তিনি রাজনীতির মাঠে পরিচিত নেতা। জমিয়তের কয়েকজন নেতা গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বিএনপি’র সঙ্গে সমঝোতা হলে সিলেট-৪ আসন তারা চাইবে। এ আসনের সিদ্ধান্ত ছাড়া সমঝোতার পথ খুলবে না। সিলেট-৫ আসনে জমিয়তের প্রার্থী দলের সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক। এ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না করায় এখন সুবিধা নিচ্ছে জমিয়ত। তবে আসনে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী এখনো ভোটের মাঠে সক্রিয় প্রচারণায় রয়েছেন। সিলেটে সফরকালে গত শুক্রবার রাতে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন জমিয়ত সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন- জোট হলেও জমিয়ত নির্বাচনে আছে না হলেও তারা আছে। আপাতত এককভাবে নির্বাচনের চিন্তাভাবনা তাদের। সমঝোতার সময় এলে তারা আলোচনার মাধ্যমে সেটি চূড়ান্ত করবেন।