ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বাইরে অবৈধ অস্ত্র আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রয়োজনে বর্ডার ও সি-রুট সিল করা হবে। এছাড়া পুরো দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হবে নিরাপত্তা ছক।
বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় দুই ডজন বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে কমিশন। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মতামত, সুপারিশ ও প্রস্তাবসমূহ লিখিতভাবে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে যথাসময়ে। থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করে ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা করতে হবে পুরো দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে। জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট হলে বিভিন্ন বাহিনীকে সে মোতাবেক রাখতে হবে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। গোয়েন্দা তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করে তথ্য বিনিময়, কমিশনকে অবগত করতে হবে। নির্বাচন-পূর্ব সময়েও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাখতে হবে প্রস্তুতি। অপতৎপরতা রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যে বাহিনী ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকবে, সেই বাহিনীকেই প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন থেকেই সকল বাহিনীকে নিতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে রাখতে হবে আগাম প্রস্তুতি।
এছাড়া নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, সংখ্যালঘু ও জঙ্গি ইস্যু মোকাবিলা, ভয়েস ক্লোন করে চরিত্রহনন প্রতিরোধ, খারাপ তথ্য প্রতিরোধে নিয়মিত ও দ্রুততার সঙ্গে ভালো তথ্য সরবরাহ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতার, তফসিল ঘোষণার পর থেকে চেকপয়েন্ট বসিয়ে র্যান্ডম চেক করা, প্রয়োজনে বর্ডার ও সি-রুট সিল করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নাশকতা প্রতিরোধ, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের তালিকা করে তাদের নিরাপত্তা প্রদান, কালো টাকার ব্যবহার রোধে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আগত ও সংরক্ষিত ডাকযোগে ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাহিনীর যেসব সদস্য দীর্ঘদিন একই স্থানে পদায়িত আছেন তাদের বদলি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা যথাসময়ে কমিশনে দাখিল এবং নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে।
বিভিন্ন বাহিনীর দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে বর্ডার আউটপোস্টগুলো (বিওপি) কমপক্ষে ২০ জন সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। তবে কক্সবাজারের প্রতি বিওপিতে থাকবে ২৫ জন সদস্য। নির্বাচনে ৪৯২টি উপজেলায় এ বাহিনীর ১১ হাজার ৬০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা সম্ভব হবে। তবে সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করাই ভালো হবে বলে মতামত দিয়েছে তারা। ভোটে ৬০টি উপজেলায় বিজিবি ও র্যাব এবং ৩৭৭টি উপজেলায় বিজিবি ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে মোতায়েন হয়ে নিরাপত্তা দিতে পারবে।
র্যাব ভোটে ভ্রাম্যমাণ টিম হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচনে তাদের ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে। ভোটের দায়িত্বে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো এই বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া গুজব প্রতিরোধে সাইবার ইউনিটও কাজ করবে।
৯০ হাজার থেকে এক লাখ সেনাসদস্য ভোটে মোতায়েনের প্রস্তুতি রয়েছে সেনাবাহিনীর। দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনি কাজে জরুরি প্রয়োজনে আর্মি এভিয়েশনও প্রস্তুত থাকবে। অঞ্চলভেদে নিয়োজিত থাকবে কমান্ডো বাহিনীও। নৌবাহিনীর নিয়োজিত থাকতে পারে তিন হাজার সদস্য। বিমানবাহিনীও পরিবহন বিমান, সরঞ্জাম ও জনবল প্রস্তুত রাখবে। ভোটকেন্দ্র প্রতি পুলিশের অন্তত একটি করে বডিওর্ন ক্যামেরা থাকবে। নয়টি জেলার ১৭টি উপজেলায় কোস্টগার্ডের তিন হাজার সদস্য মোতায়েন রাখা সম্ভব হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেছেন, ভোটের আগে-পরে আট দিনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের সুপারিশ এসেছে। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য নিয়োজিত থাকতে পারে। তবে এখনই কিছু চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ভোটের আগে।
তিনি বলেন, ভোটে বিভিন্ন বাহিনীর আট লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকবে। আনসারের সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখের মতো, সশস্ত্র বাহিনীর ৯০ হাজার থেকে এক লাখের মতো এবং পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড থেকেও প্রয়োজনীয় সদস্য নিয়োজিত করা হবে।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এজন্য সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি।
উৎস: বাংলানিউজ২৪