Image description

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আদেশ জারি ও গণভোট নিয়ে বিতর্কের সমাধান আলোচনার টেবিলেই করতে চাচ্ছে বিএনপি। তবে দলটি মনে করছে- বল এখন সরকারের কোর্টে। এক্ষেত্রে সরকার তাদের আলোচনার টেবিলে ডাকলে তারা যাবে। আরও যদি রাজপথে ঠেলে দেয় তাহলে তারা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পিছু হটবে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সব সময়ই সহযোগিতা করে আসছে দলটি। সংস্কার প্রশ্নেও বেশ কিছু বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। যদিও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে যে- তারা সংস্কার চায় না। সম্প্রতি সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেয়ার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করার পর আবারো সেই একই সুর উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে মতভেদ। এই অনৈক্য বর্তমান সরকার, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সৃষ্টি করেছে বলে মনে করে বিএনপি। এ কারণে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে এবং নির্বাচন পিছিয়ে গেলে তার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এবং এই দুই দল দায়ী হবে বলেও মনে করছেন বিএনপি’র নেতারা।  

এই মতবিরোধের কারণেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ অনিশ্চয়তা দেখছে। যদিও অনিশ্চয়তার বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। তারা কোনো ফাঁদে পা দিতে চায় না। তাদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তরিক হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হবে না। আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আদেশ জারি ও গণভোটে যে মতভেদ তৈরি হয়েছে তা নিয়ে প্রয়োজনে তারা আবারো প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবেন।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আদেশ জারি, গণভোট এবং নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র নেতারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী ৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে, ৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। তাদের এখন বিরাট রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত ও এনসিপি শুধু বিএনপি’র বিরোধিতাই করে যাচ্ছে। এরপর বিএনপি এগুলো সহ্য করবে না। যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দায়ী হচ্ছে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ। 

ওদিকে ২৭০ দিন ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার পর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আদেশ জারি ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পরস্পরবিরোধী। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ দিয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে বিএনপি। সনদের কয়েকটি দফা বিএনপি’র অগোচরে সংশোধন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ দলটির। সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটও মানবে না তারা। ওদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর গণভোটের আয়োজনের পক্ষে জামায়াত। দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতসহ ৮টি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। অন্যদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই সনদ স্বাক্ষর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এনসিপি। রাজনৈতিক এই মতবিরোধে দ্বিধায় পড়েছে সরকার। যদিও গণভোটসহ সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে ১৫ই নভেম্বরের আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এটার সমাধান বর্তমান সরকারের কাছে। উপদেষ্টা পরিষদের কাছে। বিএনপি অনেক প্রশ্নে ছাড় দিয়েছে। বর্তমান সরকার আমাদের যাদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে, একটা জামায়াতে ইসলামী, আরেকটা এনসিপি। তাদের সাজিয়েছে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ। তারপরেও বিএনপি যাতে দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, গণতন্ত্রে উত্তরণ করতে পারি, সেজন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমরা অনেক অন্যায় আবদার মেনে নিয়েছি। আর এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমরা সই করেছি। এই সনদ বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু এমন কিছু জিনিস তারা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, সেটার সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত না।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট বিএনপি কোনো ভাবেই মানবে না। বিএনপি শুরু থেকেই উদারতা দেখিয়েছে। কিন্তু বিএনপি’র সঙ্গে স্পষ্ট প্রতারণা করা হয়েছে। বিএনপিসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলের যে নোট অব ডিসেন্ট, চূড়ান্ত খসড়ায় সেগুলো বাদ দেয়া হলো কেন? কাদের সঙ্গে আলোচনা করে? এই বিমাতাসুলভ আচরণ আমরা তো মেনে নেবো না। আমরা প্রয়োজনে আবারো প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবো। আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধানের চেষ্টা করবো। 

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকে বানচাল ও বিলম্বিত করার জন্য একটা মহল উঠেপড়ে লেগেছে। বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি আন্তরিক থাকে তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আমি এক্ষেত্রে কোনো বাধা দেখি না।