Image description
জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি সংসদীয় আসনের হালচাল

দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি সংসদীয় আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াত ইসলামীর আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণার পরে প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও নির্বাচনের মূলশক্তি বিএনপির একাধিক প্রার্থী কোন্দলে ব্যস্ত। অথচ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারলে এ অঞ্চলের অন্তত ১৭টি আসনে জনসমর্থনের পাল্লা ভারী। কিন্তু ব্যাপক অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সাথে মাঠ পর্যায়ে একাধিক নেতার নানামুখী পদচারণা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এমনকি কিছু নেতাকর্মীর অনৈতিক কর্মকা-ে সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে। কিছু আসনের প্রার্থী সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিকভাবে নানাজনের নাম প্রচারের মধ্যেই দলটির অভ্যন্তরে অনৈক্য আর কোন্দল আরো প্রকাশ্যে উঠে আসছে।

তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মাত্র সাড়ে ৩ মাস বাকি থাকলেও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনমনেও এখনো কিছু অনিশ্চয়তাসহ নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাসহ মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা না থাকলেও অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। এমনকি বিষয়টিকে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব বলেও মন্তব্য করছেন পর্যবেক্ষক মহল। আর একই আসনে দলটির একাধিক প্রার্থী নানামুখী কর্মকা-ের ফাঁকে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচার ও অপপ্রচারসহ বিরূপ মন্তব্যও শুরু করেছেন। যা দলকে জনসমক্ষে অপরিপক্ক প্রমাণ করা ছাড়াও ক্রমশে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

পাশাপশি দলটির নাম ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ের পদ পদবীহীন নেতাকর্মীদের অব্যাহত অনৈতিক কর্মকা- ‘গণবিড়ম্বনা’ তৈরি করলেও তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং উদাসীনতায় দলের সাথে আমজনতার দুরত্ব বৃদ্ধি করছে। এক শ্রেণির নেতাকর্মীদের অনৈতিক কর্মকা-ে দলটির বরিশাল মহানগরী ও দুটি সাংগঠনিক জেলা কমিটিসহ এ অঞ্চলের প্রায় সব কমিটিই ইতোমধ্যে বিতর্কে জড়িয়েছে। একইসাথে লাগাতার ঐসব অনৈতিক কর্মকা-ের দুর্ভোগ আমজনতাকে ভোগ করতে হলেও দায় মেনে নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোরসহ তা প্রতিরোধের মতো নেতার সংকট সৃষ্টি হয়েছে দলটির মাঝে।

তবে এসব কিছুর মধ্যেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষিত সময়ে অনুষ্ঠিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের মধ্যে পটুয়াখালী-৪, বরগুনা-১, পিরোজপুর-২ সহ আরো অন্তত দুটি আসন বাদে ১৬টি বিএনপির জন্য নিশ্চিত থাকলেও প্রার্থী নির্ধারণের সিদ্ধান্তহীনতা ও কালক্ষেপণ সহ মাঠ পর্যায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মীদের নির্বাচনমুখী করণের ব্যর্থতার মাসুল দিতে হতে পারে। এমনকি জুলাই বিপ্লবের পরে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গণমানুষের পাশে রাখতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনই বিএনপির জন্য নিশ্চিত ছিল বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

এমনকি বরিশাল-১ থেকে শুরু করে ৬টি আসনই বিএনপির জন্য নিশ্চিত থাকলেও দলীয় কতিপয় নেতাকর্মীর কর্মকা- অনেক এলাকায়ই পায়ের তলার মাটি ক্রমশ আলগা হচ্ছে বলেও মনে করছেন মহলটি। ‘বিএনপি’র ঘাটি’ খ্যাত বরিশাল সদর আসনটিতে ইতোমধ্যে প্রায় ৯ জন প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। অথচ এ আসনটি নিয়েই জামাত ইসলামীর সাথে ইসলামী আন্দোলন দীর্ঘ টানাপোড়নের পরে ‘একটি সমঝোতার প্রায় কাছাকাছি’ চলে এসেছে বলে আভাস মিলছে। সে ধরনের সমঝোতার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত টেকসই হলে কোন্দলে ভর করে নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপির জন্য অতীত ফলাফল যথেষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলেও সতর্ক মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

অপরদিকে গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, শহর ও মহানগর কমিটি নিয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে থেকে সিদ্ধান্তহীনতাসহ অযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠনে সাধারণ ভোটরদের কাছে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। গ্রহণযোগ্যদের দূরে সরিয়ে অযোগ্য লোকদের দিয়ে নানা কমিটি গঠনের ফলে বরিশালের ২১টি আসনেই গত ১৪ মাসে দলটির সাথে আমজনতার দূরত্ব অনেক বৃদ্ধি করেছে।

এমনকি অতীতে জাতীয় পার্টির হয়ে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করা নেতাই এখন বরিশালে বিএনপির নেতৃত্বে এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে নগরীতে পোস্টার ব্যানারে ভরে গেছে। অথচ এসব নেতৃত্বর উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায়ই ৫ আগস্ট পরবর্তি সময়ে দলের নাম ভাঙিয়ে যেসব ‘ক্ষুধার্ত ছারপোকা’রা আমজনতাকে ক্ষুব্ধ করছে, তারাই এখন বরিশালে বিএনপির ঐসব যোগ্য (?) নেতৃত্বের কাছে অনেক বড় শক্তি (?)। আর এসব শক্তির কারণেও দলটির মাঝে ক্রমশ বিভেদের রেখাও স্পষ্ট হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে অযোগ্য নেতৃত্ব আর তাদের ‘শক্তি’র কারণেই এক সময়ের বিএনপি’র ঘাটি বরিশালেও দলটির সাথে আমজনতার দূরত্ব বাড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

এমনকি চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের কারণে চলমান পরিস্থিতির সাথে নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাস আগেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে মাঠ গোছানোর ব্যর্থতা ও উদাশীনতাকে দলটিকে ক্রমশ আত্মহননের পথে নিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। যা দক্ষিণাঞ্চলে দেশের বৃহত্তম এ দলটির জন্য আগামীতে খুব ভালবার্তা নাও দিতে পারে বলে মনে করছেন মহলটি। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তি সময়ে বরিশালের ২১টি আসনই দলটির জন্য নিশ্চিত ছিল।

ব্যর্থ নেতৃত্ব আর মাঠ পর্যায়ে ‘ক্ষুধার্ত ছাড়পোকা’র দল সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই জনগণকে ক্রমশ বিতশ্রদ্ধ করে আস্থার পরিস্থিতিকে ক্রমশ তলানিতে পৌঁছে দিচ্ছে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। অথচ বিএনপির বর্তমানের মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেলা ও মহানগর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পরিপূর্ণ সংযত আচরণ করে জনগণের পাশে থেকে পরিস্থিতি অনুকূলে নেয়ার নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তারা দল ও দলীয় প্রার্থীদের ‘জনগণের জন্য ও জনগণের প্রার্থী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেও নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনেই ইতোমধ্যে বিএনপির দেড় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় কোন্দলকে এযাবতকালের সর্বাধিক নাজুক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাস আগেও প্রার্থীতা চূড়ান্ত করে দলীয় প্রার্থীদের মাঠ পর্যায়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত দিতে না পারাকে দলটির নিরব সমর্থকসহ আমজনতার মাঝেও নানা প্রশ্নের সাথে হতাশাও সৃষ্টি করছে।

পাশাপাশি চাঁদাবাজ-দখলবাজদের কঠোরভাবে দমনসহ প্রার্থী বাছাইয়ের এ কালক্ষেপণকে এখন ব্যর্থতা হিসেবেও বিবেচনা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এখনো প্রতিটি আসনেই ৫ থেকে ৯ জন প্রার্থী দলের উচ্চ পর্যায়ে নানামুখী তদবিরে ব্যস্ত।

এমনকি খোদ বরিশাল মহানগরীর ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী সাধারণ কর্মীরাও ‘অবিলম্বে প্রার্থী বাছাইকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ মনে করে ‘অবিলম্বে দলে থাকা সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ’রও দাবি জানাচ্ছে। এ নগরীর ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার কেবল টিভির লাইন দখল ও নানামুখী চাঁদাবাজির কারণে বিএনপির এককালের দুর্গে ইতোমধ্যেই দুঃখ ভর করেছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
অপরদিকে বিএনপি এ অঞ্চলে কোন কোন আসনে কোন দলের সাথে সমঝোতা করতে যাচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। পটুয়াখালী-৩ আসনে ভিপি নুরকে সমর্থন দিয়ে বছরখানেক আগে স্থানীয় কমিটিকে হাইকমান্ড চিঠি দিলেও সেখানে বিএনপিই এখন তার বড় শত্রু। এ অঞ্চলের আরো কয়েকটি আসনে আসন সমঝোতা নিয়ে সংকট চলছে। কিন্তু সমাধান নেই।

তবে ‘জনগণের মনোভাবকে বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত প্রার্থী বাছাইসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আমজনতার পাশে দাঁড় করাতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের অন্তত ১৮টির ফলাফলই বিএনপির অনুকূলে আনা সম্ভব বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। কিন্তু সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। কারণ মাঠ পর্যায়ের কা-ারিবিহীন কর্মীদের বর্তমান কর্মকা- দলটিকে ক্রমশ আমজনতার কাছে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে।