Image description

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলা-মামলার শিকার হয়নি এমন বিএনপি নেতাকর্মীর সংখ্যা খুবই কমবিএনপির হেভিওয়েট বেশিরভাগ নেতার দিন কেটেছে আদালতের বারান্দায়ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসার বাদ দিয়ে জামিনে আশায় তাদের দৌড়াতে হয়েছে বিচারকের এজলাসেজামিন পেলেও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নেতাকর্মীদের। 

কিন্তু এরমধ্যেও কিছু নেতা যারা বিগত দিনে এমপি ছিলেন কিংবা ভালো পদে ছিলেন তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেনফলে তারা কোনো হামলা মামলার শিকার হননিঅন্য নেতারা যখন আদালতের বারান্দায় দিনের পুরো সময় ব্যয় করছেন তখন তারা নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিলেনএবার আওয়ামী লীগের পতনের পর সেসব নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেনআওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করা এসব নেতাদের নিয়ে নতুন করে ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ডবিএনপির পক্ষ থেকে গঠন করা একাধিক গবেষণা কমিটি এ নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানা গেছে।  বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যারা বিগত দিনে কোনো হামলা-মামলার শিকার হননি এমন নেতাদের একটি তালিকাও করেছে গবেষণা টিমবিএনপির এমপি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও জিজ্ঞেস করা হচ্ছে বিগত দিনে কে কতটি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন

এদের মধ্যে অনেক নেতাই সদুত্তর দিতে পারেননিতারা এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। 

যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না জনকণ্ঠকে বলেন, আমি নিজে শতাধিক মামলার আসামি ছিলামযারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়েছেন এবং কোন মামলা-হামলার শিকার হননি দল তাদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবেনির্যাতিত, ত্যাগী এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে নাই এমন নেতারাই এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হবে। 

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, যারা সত্যিকার অর্থেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে দলের ক্ষতি করেছেন তাদের ব্যাপারে দল কঠোর অবস্থানে থাকবে

বিএনপির নেতাদের আইনজীবীদের তথ্য মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার অভিযোগে করা হয়েছে বেশিরভাগ মামলাএ ছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সারাদেশে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মামলা দেওয়া হয়গায়েবি মামলানামে পরিচিতি পায় এসব মামলা

মামলাগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে সরকার একের পর এক এসব মামলা দিয়েছেএ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি আন্দোলন ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে

বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা হয়েছেএসব মামলা আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরেএর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৫০ থানায় ১৭ হাজার ৫৮৩টি মামলা রয়েছে বলে দাবি বিএনপির

জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি মামলার আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলতার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সময়ে মামলার সংখ্যা ৪৫০বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১৮০, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ৩৩টি মামলার আসামি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সভাপতি এবং উপনির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা ৩১৭, বিএনপির  স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী (২৫০ মামলা), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম (২২৬ মামলা), যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন (৩১৫ মামলা)স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী (১৭০ মামলা), সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান (১৪৬ মামলা), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল কাদির ভূঁইয়া (১৫০ মামলা), আকরামুল হাসান (১৪৬ মামলা), হাবিবুর রশীদ (১০৩ মামলা), বজলুল করিম  চৌধুরী (৯৫ মামলা), মামুন হাসান (২০০ মামলা), সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল (১১০ মামলা), গণশিক্ষাবিষয়ক সহবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার (২১১ মামলা) এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা ছিল ১০৬টি

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, তাদের কিছু মামলার জামিন হয়েছে আবার কিছু মামলা থেকে খালাস পেয়েছেনএমনকি এখনো তারা আদালতে মামলার হাজিরা দিতে যান

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি নেতা বলেন, দলকে ভালোবেসে এবং দলের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন এবং তারা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেননেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে অনেক নেতাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছিলঅনেকে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিব্যি ব্যবসা বাণিজ্যও করেছেনআবার তারাই এখন নমিনেশন চাচ্ছেনবিষয়টি খুবই দুঃখজনক