Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় আসা-যাওয়া বাড়িয়েছেন লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সব দলের প্রার্থীই জনগণের সামনে নিজেকে তুলে ধরার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে রামগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপি ছিল কোণঠাসা। এসময় অনেকটা গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে জামায়াতে ইসলামী। তবে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পরে একরকম প্রতিযোগিতা দিয়েই মাঠে সক্রিয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

এলাকায় সময় দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুব আলম। তিনি বর্তমান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই। তাদের বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লা রামগঞ্জের ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি মাহবুব আলম গ্রামের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেন, তার ভাই মাহফুজ আলম রামগঞ্জ থেকে প্রার্থী হবেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটগত কারণে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন দিয়েছিল। ‘রাতের ভোট’খ্যাত ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। এরপর এলাকায় এসে তিনি তারেক রহমানের বরাত দিয়ে বলেন, তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সবমিলিয়ে বিএনপির মনোনয়ন অঙ্কে জোটগত কারণে সামনে রয়েছে শাহাদাত হোসেন সেলিমের নাম।

অতীতে নির্বাচিত যারা

১৯৮৪ সালে নোয়াখালী থেকে আলাদা হয়ে জেলা হয় লক্ষ্মীপুর। ১৯৭৩ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। ১৯৮৬ সালে আ ন ম শামছুল ইসলাম লক্ষ্মীপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে এম এ গোফরান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (রব) প্রার্থী হিসেবে এমপি হন। ১৯৯১ সালে জিয়াউল হক জিয়া বিএনপি থেকে, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নাজিম উদ্দিন আহমেদ (স্বতন্ত্র), জুনের নির্বাচনে জিয়াউল হক জিয়া বিএনপি থেকে, ২০০১ সালে জিয়াউল হক জিয়া এবং ২০০৮ সালে নাজিম উদ্দিন আহমেদ বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। তখন আওয়ামী লীগ জোটগত কারণে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়ালকে মনোনয়ন দিলে তিনি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ‘নাটকীয়ভাবে’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান এমপি হন।

বর্তমানে আলোচনায় যারা

জেলার রাজনৈতিক মাঠে বর্তমানে সক্রিয় বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ হারুন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে মাশফিকুল হক জয়, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নাজমুল হাসান পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন পাটওয়ারী, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদুর রহমান মাহমুদ এবং এবি পার্টির আনোয়ার হোসেন।

তবে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম। তিনি সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রমে এলাকায় সময় দিচ্ছেন।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি আগে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। তারপর হবে নির্বাচনের কার্যক্রম। আপাতত আমরা লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

বিএনপিতে কোন্দল

রামগঞ্জ পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুর-১ আসন। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, মোট ভোটার দুই লাখ ৭৭ হাজার ৭৬০।

লামচর, ভোলাকোট ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রামগঞ্জ বিএনপি এখন তিন ভাগে বিভক্ত। জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন কারণে-অকারণে কোন্দলে জড়াচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকে জড়াচ্ছেন সংঘাতে।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ইয়াছিন আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের নির্দেশে ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন।’

বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘দল একবার আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে আমি সরে দাঁড়িয়েছি। এবারও আমি মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’

লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে আমিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তখন যারা অংশ নিয়েছেন তারাই এখন সম্ভাব্য প্রার্থী। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে আদৌ নির্বাচন হবে কি না, হলেও কীভাবে হবে সেটা দেখার বিষয়।’

এলডিপি নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মাঠে গ্রুপিং, পছন্দ-অপছন্দ থাকবেই। ৩০০ আসনে বিএনপির ৯০০ প্রার্থী থাকবে, আবার মনোনয়ন চূড়ান্তের পর সবাই এক হয়ে যাবে। শুধু তারেক রহমান নন, কেন্দ্রীয়-জেলা নেতারাও আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলছেন। ২০১৮ সালের পর থেকে আমি প্রতি সপ্তাহে এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করছি।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ও দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। জনগণের বেশ সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনেও আমরা ভালো করবো ইনশাআল্লাহ।’

এ বিষয়ে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী রামগঞ্জ উপজেলা আমির নাজমুল হাসান পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে জামায়াত ভোটের মাঠে শক্তিশালী। তরুণ ভোটাররাও এবার জামায়াতকে ভোট দেবে। আমরা নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাচ্ছি।’