Image description

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর প্রাণহানির ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় মেট্রো চলাচল। হঠাৎ মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। এতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে লেগে যায় যানবাহনের তীব্র  জট। দিনভর তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহান নগরবাসী। দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে। পরে আড়াই ঘণ্টার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মতিঝিল থেকে শাহবাগ অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। 

সরজমিনে দেখা যায়, মেট্রো বন্ধ থাকায় দুপুরে অফিসগামী মানুষজন, শিক্ষার্থী ও  সাধারণ যাত্রীরা স্টেশনে এসে ফেরত যাচ্ছিলেন। মতিঝিল, ফার্মগেট, শাহবাগ, বিজয় সরণি, উত্তরা, কাজীপাড়াসহ সব স্টেশনে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।  কোনো খবর না পেয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাধ্য হয়ে প্ল্যাটফরম ছেড়ে রাস্তায় নেমে সড়ক পথে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ফলে  সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। আবার অনেকে বাস না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। 

দুপুর পৌনে ১টা মতিঝিল মেট্রো স্টেশনে বিশৃঙ্খল অবস্থা সবাই ছুটছেন কাউন্টারের দিকে টিকিট ফেরত দিতে, আবার কেউ যাচ্ছেন তথ্য জানতে কখন চালু হবে। মেট্রোরেলের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিল হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন মেট্রোরেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। আজও টিকিট কেটে ট্রেনে উঠবো, এমন সময় ঘোষণা এলো সার্ভিস বন্ধ। 

আরেক যাত্রী রুমানা হক বলেন, মেট্রোরেল আমাদের জীবনে স্বস্তির এক নতুন আশা এনে দিয়েছিল। কিন্তু আজকের এই দুর্ঘটনা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। টিকিট কেটে অনেক্ষণ ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সাড়ে ১২টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিলো মেট্রো চলবে না। কী এক বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে গেছি। অফিসে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা লেগে যাবে। মেট্রো বন্ধ থাকায় যানজট অনেক হবে সব চাপ সড়কে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কীভাবে যাবো বুঝতেছি না।  

বিকাল সাড়ে তিনটা সচিবালয় মেট্রো স্টেশন থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, বিকাল ৫টায় আমার অফিস, এখন শুনি মেট্রো বন্ধ খুব বাজে অবস্থায় পড়ে গেলাম আজকে অফিসে গুরুত্বপূর্ণ  মিটিং ছিল। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন- ঐ জায়গায় নকশায় নাকি ত্রুটি ছিল। এখন আমাদের প্রশ্ন ত্রুটি নিয়ে এত দিন ধরে কীভাবে মেট্রো চললো? মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই?  দেশের এত উন্নত প্রযুক্তির এ বেহাল দশা কীভাবে দেশ চলে বুঝলাম না? আমরা যে ভোগান্তির শিকার হলাম সেটা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু যে ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে তার পরিবারের কী হবে? 

এদিকে বিকাল ৩টার পর পুনরায় মেট্রো চালু হলে আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। একক যাত্রার টিকিট কেনার লাইনে দেখা যায়- যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট নিতে হয়েছে যাত্রীদের। ভোগান্তির শিকার আসমা আক্তার বলেন, হাসপাতালে যাবো আমার মা অসুস্থ। এখানে এসে দেখি অনেক ভিড় প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকিট পেয়েছি। মেট্রোতে ওঠতেও অনেক ধাক্কাধাক্কি করে ওঠতে হয়েছে। তিল পরিমাণ জায়গা ছিল না মেট্রোতে। বাসে অনেক যানজট, আজকে পুরো ঢাকায় জ্যাম, তাই মেট্রোতে এসেছি। মেট্রোতে না আসলে ৩ ঘণ্টার অধিক সময় লেগে যেতো। 
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মেট্রোরেলের সব চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকাল ৩টায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো চলাচল আবার আংশিক চালু হয়।