Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে দলটি।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ আসনে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন। ডিসেম্বরে তারা নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ বা তফসিল ঘোষণা করবে। সেই ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে জামায়াতের তৎপরতাও দিনদিন বাড়ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি জামায়াত তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য এবং কৌশলেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। আগের তুলনায় অধিক সেবামুখী কার্যক্রমে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করছে। এ ছাড়া জামায়াত এবার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তরুণ ভোটার ও প্রথমবারের ভোটারদের ওপর।

সংশ্লিষ্টদের মতে, জামায়াত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের প্রতীক নিয়ে রাজনীতি করতে পারেনি। তবে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার কারণে তারা বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল দল।

দলটির নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রতিটি জেলার সাংগঠনিক টিমকে সক্রিয় করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় সভা-সমাবেশ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

কিছু নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি জেলা-উপজেলা ও পৌরসভায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দলটি। শুধু জেলা, উপজেলা ও পৌরসভায় নয়, এসব এলাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান থেকে মেম্বার পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে।

দলীয় সূত্র মতে, আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য অতীতের ধরাবাঁধা নিয়মে এবার পরিবর্তন আনবে জামায়াত। এলাকায় গ্রহণযোগ্য, জাতীয়ভাবে পরিচিত কোনো মুখ প্রার্থী হতে চাইলে বিবেচনা করা হবে। আগ্রহ ও যোগ্যতা থাকলে অমুসলিম ব্যক্তিদেরও বিবেচনা করা হবে।

চলতি বছরের শুরু থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আসনে খসড়া প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে পোলিং এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামায়াত গত বছরের ডিসেম্বরে সারা দেশে প্রতিটি আসনে প্রথম পর্যায়ের জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপের প্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সূত্র মতে, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে খসড়া প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। প্রার্থীরা যার যার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে অনেক আসনের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে জানা গেছে। কিছু আসনে বিতর্কিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেওয়া হতে পারে।

স্থানীয় নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোদমে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রার্থী মনোনয়নের কাজ শুরু করেছে দলটি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর দলটি নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন নেতারা।

ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জামায়াত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অংশ হিসেবে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলায় একাধিক জেলা ও মহানগরে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ জোরদার করা হয়েছে।

জামায়াতের অভ্যন্তরীণ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, জামায়াত রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের সব, খুলনার ৩৫ আসনের সব, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের ১০-১২টি, বরিশালের ২১ আসনের তিনটি, চট্টগ্রামের ৫৮ আসনের ১২টি, সিলেটের ১৯ আসনের তিনটি, ময়মনসিংহের ২৪ আসনের দুটি এবং ঢাকার ৭১ আসনের শতাধিক আসনে বিএনপির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে আসন ভিত্তিক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে কিছু আসনের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এর মধ্যে ক্লিন ইমেজের লোক অর্থাৎ যারা গ্রহণযোগ্য ও পরিচিত মুখ তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনেই সম্ভাব্য প্রাথমিক প্রার্থী দেওয়ার মাধ্যমে পূর্ণ নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে এমন কিছু আসন থাকবে, যেসব আসনে আমরা নির্বাচন করতে পারব না। যদিও আমরা ৩০০ আসন চূড়ান্ত করেছি। প্রাথমিক বাছাই হয়ে গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচন এখন জামায়াতের প্রথম অগ্রাধিকার। পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিসহ পাঁচ দফা দাবির আন্দোলনও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ। জামায়াত নির্বাচন চায় না—এ ধরনের অপপ্রচার সম্পূর্ণ মিথ্যা। জামায়াত নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

অর্ধশত সাবেক শিবির নেতা নির্বাচনী মাঠে
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে লড়বেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ; জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট-১ আসন; জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসন; ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসন; ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সিলেট-৬ আসন থেকে লড়বেন।

এ ছাড়া মানিকগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণায় সরব আছেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ জাহিদুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে লড়বেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মুহাম্মদ শিশির মনির, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ফেনী-৩ (দাগনভূঁঞা-সোনাগাজী) আসন থেকে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন। জামায়াত থেকে তাকে ওই আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি এলাকায় নিয়মিত প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৬তম সভাপতি ও শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আতিকুর রহমান ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া ও সদর উপজেলার একাংশ) আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মহানগর সদর থানার আমির অধ্যক্ষ সালাহউদ্দিন আইউবী, কুমিল্লা-৫ আসন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন, শেরপুর সদর-১ আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মু. গোলাম কিবরিয়া নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসন থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলা) আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করবেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মপরিষদ সদস্য মাজেদুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আসন থেকে লড়বেন ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব আলম সালেহী, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ) আসন, প্রয়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর জামাতা ও শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল কুমিল্লা-৮ আসন, বর্তমান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম-১ আসন, সাবেক কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক শেখ নেয়ামুল করিম (বাকসু জিএস) ঝালকাঠি-২ আসন, রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি এমাজ উদ্দিন মন্ডল রাজশাহী সদর, সাবেক কেন্দ্রীয় স্কুল সম্পাদক মতিউর রহমান দিনাজপুর-১ আসন, খুলনা-৬ আসন থেকে (কয়রা-পাইকগাছা) কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক অফিস সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ঢাকা-৮ (শাহবাগ, মতিঝিল, রমনা) আসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার শাকের উল্লাহ কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসন, সাবেক কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আমিনুল ইসলাম মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা) আসন, রাজশাহী মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. কেরামত আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, সাবেক কেন্দ্রীয় স্কুল সম্পাদক হারুন অর রশীদ লালমনিরহাট-৩ আসন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ চুয়াডাঙ্গা সদর থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন।