
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল সংসদের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
নির্বাচন সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের সাথে গতকাল রোববার এক মতবিনিময় সভায় কর্মকর্তারা এ কথা বলেন। চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মনির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. এ. কে. এম. আরিফুল হক সিদ্দিকী, নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, প্রফেসর ড. মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার, প্রফেসর মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, ড. মো. আনোয়ার হোসেন, চবি আইসটি সেলের পরিচালক প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী, চাকসু নির্বাচন আচরণবিধি মনিটরিং সেলের সদস্য প্রফেসর ড. খাদিজা মিতুসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য সচিব প্রফেসর ড. এ. কে. এম. আরিফুল সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা বার বার শিক্ষার্থীদের সাথে বসে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা চাই সুন্দর একটি চাকসু নির্বাচন আযোজন করার জন্য। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রশাসন আমাদের সবরকম সহযোগিতা করছে। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু, উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হোক।
মতবিনিময় সভায় প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা প্রার্থীদের এজেন্ট, ভোটের ব্যালট, ভোট প্রদান পদ্ধতি, ভোট গণনা পদ্ধতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্ন, মতামত ও পরামর্শ পেশ করেন। নির্বাচনের নিরাপত্তা ও ভোটের ব্যালট সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন আইসিটি সেলের পরিচালক প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী। তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ছাত্রীসংস্থার আচরণবিধি লঙ্ঘন : চাকসু নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসংস্থার বিরুদ্ধে। গত ২ অক্টোবর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে একটি পত্র জমা দিয়েছে চবি ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান এতে স্বাক্ষর করেন। তবে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে ছাত্রী সংস্থার চবি শাখার নেতৃবৃন্দ।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের এই অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রীসংস্থার নেত্রীরা ফার্স্ট এইড বক্স বিতরণ করেছেন, যাতে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা আরো অবগত হয়েছি ওই হলের প্রভোস্ট তাদের সহযোগিতা করেছেন। ওই হলের প্রভোস্ট নির্বাচন কমিশনের সদস্য হয়েও আচারবিধি লঙ্ঘনে সহযোগিতা করায় উনি নির্বাচনী শপথ ভঙ্গ করেছেন। হল ছাত্রীসংস্থা ও প্রভোস্টের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানায় ছাত্রদল।
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, শামসুন নাহার হলে নির্বাচনী আচারবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। এক্ষেত্রে হলের প্রভোস্ট এতে জড়িত আছেন। তিনি চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য। এক্ষেত্রে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। এছাড়া এই হলের প্রভোস্টের এমন আচরণ পক্ষপাতমূলক বলে আমি মনে করছি।
তবে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সেক্রেটারি নাহিমা আক্তার দ্বীপা। তিনি বলেন, আমরা ফার্স্ট এইড বক্সটি হলে দিয়েছিলাম গত ২২ আগস্ট। চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমরা এটা দিয়েছি। তবে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হলে আমরা এটা সরিয়ে নিই। পরবর্তীতে হলে এক ছাত্রীর দরকার হলে এটি ব্যবহার করেন। কিন্তু এটাকে শামসুন্নাহার হলের ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও যথাযথ উত্তর দিয়েছি।
এ বিষয়ে শামসুন নাহার হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আরা হক বলেন, ফার্স্ট এইড বক্সটি হলে ২২ আগস্ট থেকে ছিল। তবে তখন ছাত্রীসংস্থার মেয়েদের রুমে ছিল এবং ওখান থেকেই মেয়েরা প্রয়োজনে ব্যবহার করতো। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার একটি মেয়ের জরুরি দরকার হলে ছাত্রীসংস্থার মেয়েরা এটি সিকিউরিটি গার্ডের টেবিলে দিয়ে যায়।
আমি তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে, পরদিনই তারা আবার দুঃখ প্রকাশ করে এটি সরিয়ে নেয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ফার্স্ট এইড বক্সটি হল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ছাত্রীসংস্থা ও প্রভোস্টকে শোকজ করা হয়েছে। ওনাদের মতামতের পর যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বহুল আকাক্সিক্ষত চাকসু নির্বাচন। নির্বাচন কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদে সর্বমোট প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪১৫ জন এবং হল সংসদে অংশ নিচ্ছেন ৪৯৩ জন। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৬৩৪ জন।