
দেশের সরকার প্রধান কে? ড. ইউনূস? নাকি তার চেয়েও কেনো শক্তিশালী কেউ আছেন? এই প্রশ্ন এমন একটা সময়ে আসলো যখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নিজের অধীনস্থ একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন সচিব থেকে মোখলেসুর রহমানকে অপসারণের পর গত দু’সপ্তাহে এ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। মূলত প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ধিত সফরে থাকার কারণেই সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টি এই দু’সপ্তাহ চালকবিহীন এবং কর্মবিহীন অবস্থায় থাকে।
পূজার ছুটি শেষে আজ রোববার ৫ অক্টোবর সরকারি কর্মদিবসের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বসেন বেলা ১১ টায়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং সার্বিক বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য হতে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা মেজাজের একজনকে জনপ্রশাসন সচিব হিসাবে নিয়োগের নির্দেশনা দেন। দ্রুতই আজ অপরাহ্নে এ সংক্রান্তে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার দফতরে।
কিন্তু সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জামায়াতে ইসলামী মারাত্মক কর্মতৎপর হয়ে ওঠে। প্রথমে তারা জামায়াতি হিসাবে পরিচিত কেবিনেট সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ ফোন করান মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথীকে জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের ফাইলটি আটকে দেওয়ার জন্য। সিরাজ উদ্দিন সাথী তাই করেন। এরপরের ধাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, ঢাকা মহানগরীর একজন আমির, সাবেক সচিব শফিউল্লাহ এবং বর্তমান পূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম ছুটে যান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। তারা মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি জামায়াতের পছন্দের দুই উপদেষ্টাকেও যমুনায় পাঠানো হয়। নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করে জনপ্রশাসন সচিবের নিয়োগ এবং সিলেকশন সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত আটকে যায়। তৎপরিবর্তে বিষয়টি জনপ্রশাসন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সোমবার বিকাল সাড়ে চারটায় এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। মজার বিষয় হলো, এই কমিটির একজন সদস্য ইতোমধ্যেই জামায়াতের তালিকার ১৩ ব্যাচের এক সচিবের বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন, যাকে আওয়ামী আইসিটি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ক্যাশিয়ার হিসাবে সবাই জানে। এই উপদেষ্টা মনে করেন, তিনি অন্তত আরও দুজন এডভাইজার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন।
এ ঘটনা জানাজানি হলে সচিবালয়ে অফিসারদের মধ্যে ফিসফাস উঠেছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কি স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? নাকি তিনি ডিসাইসিভ নন (সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম) এটি আগে প্রচার থাকলেও এখন তা প্রমাণিত সত্যে পরিণত হয়েছে?
উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে রুলস অব বিজনেসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে, ফলে এটি একটি অবৈধ কমিটি। সম্ভবত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ বিষয়ে ভুল বোঝানো হয়েছিল।