
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনার বর্বর ও বীভৎসতার খ-চিত্র ফুটে উঠেছে জব্দকৃত ১৭ ভিডিওতে। ভিডিওগুলো প্রদর্শন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। প্রথমেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। একপর্যায়ে একে একে সব দেখানো হয়। এর মধ্যে গত বছর ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যায়িত করা শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের চিত্রও তুলে ধরা হয়।
বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার ৫৪তম সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর সাক্ষ্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান কান কামাল এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার পর সাক্ষ্য দিতে ডায়াসে ওঠেন তদন্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন। শপথ পড়ে নিজের জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করেন। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ভয়ংকর বা নৃশংস দৃশ্য ফুটে ওঠে।
এছাড়া, রংপুর-রাজধানীর চানখারপুলে চালানো পুলিশের পুড়িয়ে মানুষ হত্যার বর্বরতার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এমনকি আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর সেই হৃদয়বিদারক ঘটনাটিও প্রদর্শন করা হয় ভিডিওতে। সবশেষে গত বছর ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ি এলাকায় পুলিশের চালানো হত্যাযজ্ঞ নিয়ে বানানো একটি প্রামান্যচিত্র দেখানো হয়। আর এসব ভিডিও প্রদর্শনী বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাড. মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তানভীর হাসান জোহাসহ অন্যরা।
এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ওই দিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত স্টেট ডিফেন্স মো: আমির হোসেন।
লাশ পোড়ানো মামলার সাক্ষ্য ৭ অক্টোবর :
এদিকে চব্বিশের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাভারের আশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানোসহ ৭ জনকে হত্যার মামলায় সাবেক আওয়ামী এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে সপ্তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আগামি ৭ অক্টোবর।
গতকাল বেলা সোয়া ১১টায় ট্রাইব্যুনাল তার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমে জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হওয়া পৃথক দুই মামলার শুনানি হয়। পরে আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় সাক্ষ্য প্রদানকারী ৯ নম্বর সাক্ষী একাত্তর টিভির স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিককে জেরা করেন পলাতক ৮ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত দুই স্টেট ডিফেন্সসহ আইনজীবীরা। বিকেল ৫টার পর পর্যন্ত তাকে তারা জেরা করেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছিলেন অনিক।
প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ ও সাইমুম রেজা তালুকদার, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও সহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ২৫ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনের মতো সাক্ষ্য দেন দু’জন। তবে অনিকের জেরা শেষ না হওয়ায় গতকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি ছিলো। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য প্রদানকারী শফিকুল ইসলামকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপরই ৮ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়।
গতকাল সাক্ষ্য প্রদানকালে এ মামলায় গ্রেফতার আসামি ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো: আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুলকে হাজির করা হয়। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ ৮ আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন।
গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্য সূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।