Image description

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে (আইএইউ) একচ্ছত্র আধিপত্য, নিয়োগ, অধিভুক্তি নবায়ন, পাঠদান, স্বীকৃতি নবায়নসহ নানা ইস্যুতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শুরু হওয়া তদন্তে আতঙ্কে রয়েছে একটি গুপ্ত ইসলামী রাজনৈতিক দলের দুষ্কৃতিকারীরা। ইসলামের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করা গুপ্তদলটির চিহ্নিত একটি মিডিয়াতে ইউজিসির তদন্তের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়েছে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তদন্তের নামে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে’ বলে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যা ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

৫ আগস্ট পরবর্তী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত ইসলামী রাজনৈতিক দলটির একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে আলেম-ওলামাদের ক্ষোভের সঞ্চার হলে বিষয়টি তদন্তে নামে ইউজিসি। বিষয়টি নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশিত হলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি, আর্থিক ও স্বজনপ্রীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসির চেয়ারম্যানকে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাঈমা খন্দকার নির্দেশক্রমে এই অনুরোধ জানান।

জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এবং গুপ্ত দলটির দলীয় কার্যালয় থেকে সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে যে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল এক চিঠিতে তা স্থগিত করার নির্দেশ দেয় ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে দেয়া ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল নিয়োগে অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং জনপরিসরে বিতর্ক এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপিত সকল পদের জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করার অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে, গুপ্ত দলটির দলীয় মিডিয়াতে ইউজিসির তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইউজিসির কাজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা ও অনিয়ম দূর করা। ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ কমিশনের ইতিহাসে অন্যতম যোগ্যতম ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে পরিচালিত ইউজিসির তদন্তের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিসন্ধি ও পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তোলা অগ্রহণযোগ্য। এতেই বোঝা যায়, কুচক্রীমহল ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আধিপত্য হারানোর ভয়ে আছে। এজন্য তারা তদন্তের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ও প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।

সচেতন মহল বলছেন, ইউজিসি তদন্তে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে লুকিয়ে থাকা গুপ্তদলের দুষ্কৃতিকারীদের মুখোশ উম্মোচন হবে। আলেম-ওলামা ও মাদরাসা-প্রেমীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। মাদরাসা শিক্ষিতদের দিয়েই চলবে প্রাণের ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে নিয়মভেঙ্গে গুপ্তদলের কোনো আধিপত্য মেনে নেওয়া হবে না। আইন পরিবর্তন করে ও কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে দলীয় যেসব লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তদন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করে তা দ্রুত বাতিল করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আলিয়া মাদরাসাগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এবং আলেম-ওলামা ও মাদরাসা-প্রেমী মানুষদের ভরসাস্থল। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ৫ আগস্টে তাদের পতনের পর আশা করা হয়েছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মাদরাসার ব্যাপক উন্নয়ন করবে। কিন্তু বর্তমানে ইসলামের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করা দলটি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে।

বর্তমান ভায়েস-চ্যান্সেলর (ভিসি) তাদের সুপারিশে নিয়োগ পেয়েছেন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় দলটির নেতাকর্মীদের নিয়োগ দিয়ে এটাকে দলীয় অফিসে পরিণত করেছেন। দলটি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ফাজিল ও কামিল মাদরাসাগুলোতে তাদের নেতাকর্মীদের নিয়োগ দিয়ে মাদরাসা সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা করছে। এই ঘৃণ্য অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।