
২০১৮ সালের ঘটনা এখনো সিলেটের ভোটারদের কাছে উজ্জ্বল। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। ভোটের মাঠে নানা প্রতিবন্ধকতা। প্রশাসন, সরকার সব উল্টো। যেন উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটা। কোনো কিছুই অনুকূলে নয়। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচন।
এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া মুক্তাদির মাত্র তিন ঘণ্টায় ভোটের মাঠে চমক দেখালেন। সকালের কয়েক ঘণ্টায় দেড় লাখের কাছাকাছি ভোট তার ঝুড়িতে পড়ে। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আগের রাতে বাক্স ভরেও মুক্তাদিরের ভোটের হাওয়ায় ছিলেন টালমাটাল অবস্থা। ভোটের মাঠ থেকে মুক্তাদিরকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হলো। একে তো প্রশাসন। তার ওপর সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রাধান্য। দুপুরের পর ভোটকেন্দ্রের ভেতরেই ঢোকা যাচ্ছে না। প্রার্থী মুক্তাদিরের সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেসব নেতারা ছিলেন তারাও পড়লেন প্রশাসনের রোষানলে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে একে একে মাঠ ছাড়লেন । মাঠে কেবল একাই মুক্তাদির। বিকাল বেলা কোর্ট পয়েন্টে পুলিশি বাধার মুখে পড়লেন। একা একা হাঁটলেন জনাকীর্ণ এলাকায়।
সিলেটবাসীর কাছে বিচার দিয়ে ভোট বর্জন করলেন। মুক্তাদিরের সেই অসহায়ত্ব তখন সিলেটের মানুষকে আহত করলেও কারো কিছুই করার ছিল না। সেই ভোট শেষে মুক্তাদির একদিনের জন্য সিলেটের মাঠ ছাড়েননি। সিলেট-১ আসনে তার পিতা খন্দকার আব্দুল মালিক এক সময় এমপি ছিলেন। বিএনপি’র শীর্ষ নেতা হিসেবে সিলেট বিএনপি’র অভিভাবক ছিলেন তিনি। সিলেটে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে শুরুর দিকে যে ক’জন নেতা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে খন্দকার আব্দুল মালিক ছিলেন শীর্ষে। তার সন্তান হিসেবে সিলেটে ভোটের মাঠে নেমে খুব কম সময়ে মুক্তাদির জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে তার প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত। এ আসনে দলের ভেতরে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই। ইতিমধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ আসনে নির্বাচন করার তোড়জোড়ও তার নেই। তবে মাঠে আছেন। বলছেন; ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে বিএনপি’র তরফ থেকে মুক্তাদিরের প্রার্থী হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। সিলেটের ভোটে ‘ফ্যাক্টর’ খন্দকার মুক্তাদির। দলগতভাবে তার অবস্থান বেশ শক্তিশালী। তিনিই এখন সিলেট বিএনপি’র বড় অংশের অভিভাবক। বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও নগর বিএনপি তার হাত ধরেই সাজানো হয়েছে। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল সহ সব অঙ্গ-সংগঠনও শক্তিশালী হয়েছে। আওয়ামী লীগ জমানায় আন্দোলন সংগ্রামের সময় তিনি নেতাদের সামলিয়ে রেখেছেন। নিজেও মামলার আসামি হয়ে কারান্তরীণ হয়েছেন। সিলেট নগরে আগে থেকেই শক্তিশালী অবস্থান খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের। সদরের রয়েছে বিএনপি’র ভোট ব্যাংক। কয়েক দশক ধরে খন্দকার আব্দুল মালিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি ছিলেন মুক্তাদির। এরপর যখন তিনি ভোটের মাঠে নামেন তখন তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। বিশেষ করে সদরের প্রবীণ ব্যক্তিরা তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেন। সাধারণ মানুষও তাকে বরণ করেন সহজেই। সিলেট নগরেই বাড়ি মুক্তাদিরের। নগরের সব অলিগলি তার চেনা। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পরিবার হওয়ার কারণে তাদের রয়েছে আলাদা আধিপত্য। ফলে নগরবাসীরও কাছে তিনি কাছের জন হিসেবে পরিচিত। এ কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ভোটে চমক দেখিয়েছিলেন খন্দকার মুক্তাদির। এক যুগের বেশি সময় ধরে ভোটে থাকার কারণে সিলেটের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছাকাছি গেছেন তিনি। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগণ, সংখ্যালঘু ভোটারে তার রয়েছে আলাদা আধিপত্য। এবারের দুর্গাপূজায় আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময়ে নেমেছেন।
বিশেষ করে সামাজিকভাবে পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করছেন। এতে ভরসাও পাচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সিলেটে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তার নির্দেশে সিলেট বিএনপি’র নেতারা সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির নিজে গিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করে আস্থা ফিরিয়ে আনেন। সে সময় দোকান লুটসহ নানা অঘটনের মুখে অস্বস্তিতে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ওই সময় তিনি দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালান। এতে করে নগরে ব্যবসার পরিবেশ ফিরে আসে বলে জানিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজের নেতারা। তারা বলেন- গণ-অভুত্থানের পর নগরের আতঙ্কজনক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ছিল প্রধান কাজ। সেখানে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মাঠে নামায় খুব অল্প সময়েই ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। ওই সময় খন্দকার মুক্তাদির পাড়ায় পাড়ায় গিয়েও জনগণের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরান। সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। বিএনপি’র মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে খন্দকার মুক্তাদিরই পড়বেন বিজয়ের মালা- এ নিয়ে আশাবাদী তারা।