Image description

পাঁচ দফা দাবিতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। একইসঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতিও চালাচ্ছে দলটি। দাবি নিয়ে আন্দোলন কৌশলে দলটি রাজনীতির মাঠে সুবিধা আদায় করতে চাইছে। বিশেষ করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে চাপে রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে এই আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বণ্টন বা পিআর নিয়ে জামায়াত যে দাবি করে আসছে তা নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক পক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত রয়েছে। এই মুহূর্তে দেশে সংসদের দুই কক্ষে পিআর বাস্তবায়নের মতো অবস্থা নেই বলেও মনে করা হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত এই দাবিতে এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, বিএনপি ও সমমনা দলের পিআর নিয়ে ভিন্ন অবস্থান থাকায় জামায়াত এ ইস্যুতে নিজেদের দলীয় সুবিধা আদায় করে নিতে চায়। এ কারণে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনায় থাকা বিষয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে নেমেছে জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, জামায়াত প্রমাণ করতে চাইছে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিরোধী সরকার এবং বিএনপি। একইভাবে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ফ্যাসিবাদের বিচার এবং তাদের দোসরদের নিষিদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে উঠছে কিছু পক্ষ। ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা সাতদলকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চায় জামায়াত। 

বিশ্লেষকদের মতে, পাঁচ দফার আন্দোলনের আবরণে জামায়াত দৃশ্যত রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারের কাজও করছে। নেতাকর্মী সমর্থকদের সক্রিয় করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিও আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর সারা দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে দেয়া হতে পারে নতুন কর্মসূচি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। 

জামায়াতের প্রথম এবং দ্বিতীয় সারির অন্তত পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তাদের বক্তব্য জামায়াত নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা কেবল প্রস্তুতই নয়, নির্বাচনী কাজে ব্যস্তও রয়েছে প্রায় সবাই। তাহলে আন্দোলন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা তো গণদাবি। এ দাবি জামায়াতের একার নয়। তিনি বলেন, এই দাবি আদায়ে আলোচনা যেমন চলছে আন্দোলনও চলবে। আর নির্বাচনী প্রচার তো আমাদের দলীয় ব্যাপার। নির্বাচনী কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাবো। দাবি আদায়ের আন্দোলনের জন্য নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেমে থাকবে না। 

কিন্তু রাজপথের আন্দোলনের কারণে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে না-এমন প্রশ্নে দ্বিমত প্রকাশ করেন ছাত্রশিবিরের রাজনীতি থেকে উঠে আসা জামায়াতের তরুণ নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বাসী জামায়াত। সংঘাত সহিংসতা হবে কেন। তারপরও যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয় সতর্ক আছেন দায়িত্বশীলরা। 
কথা হয় দলের নির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। নির্বাচন-আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী দল। সরকার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে যে কোনো তারিখের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জামায়াত। যদিও কেউ কেউ বলেন আমরা নির্বাচন ঠেকাতে অথবা পিছাতে চাই। একথা একেবারেই সঠিক নয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে জামায়াতের কিছু দাবি আছে, দাবি পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টাও করা হবে। কিন্তু তাই বলে নির্বাচন বানচাল হোক এটাতো আমরা চাইতে পারি না। কারণ এতে তো দেশে অচলাবস্থা অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে-যা করোই কাম্য নয়। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাস পাওয়া জামায়াতের এই নেতা বলেন, বিগত প্রায় ১৬ বছর মানুষের ভোটাধিকার ছিল না। ফ্যাসিবাদের পতনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তবে সেই ভোটের আয়োজনটা যেন অবাধ নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর হয় সেটাই আমাদের চাওয়া। 

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ পাঁচ দাবিতে সোচ্চার থাকলেও আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্জনের স্বপ্ন দেখছে জামায়াত। প্রায় ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করার পর শীর্ষ থেকে তৃণমূল সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী তৎপরতায় সক্রিয় আছেন মাঠে-ময়দানে। টানা ৩৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত সপ্তাহে খোদ আমীর ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনী গণসংযোগে সক্রিয় হয়েছেন। এমনকি ডাকসু জাকসুর জয়ের প্রভাবে আগামী নির্বাচনে তার দলের সম্ভাবনার কথাও বলেছেন জামায়াত আমীর। একইসঙ্গে সমমনাদের নিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচনের  আভাসও দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, যারা আমাদের পছন্দ করেন, ভালোবাসেন এবং আমরা যাদের পছন্দ করি, ভালোবাসি তাদের নিয়েই আমরা আগামী নির্বাচনে তিন’শ আসনে নির্বাচন করার আশা করি। সেই নির্বাচনে বিজয় লাভ করার লক্ষ্যে আর্থিক কুরবানিসহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য আমি সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। শনিবার রাজধানীর মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে জামায়াত আমীর এসব কথা বলেন। 

আন্দোলন নির্বাচনের একই চিত্র দেখা যায় ইসলামী আন্দোলন, সমমনা কয়েকটি দলের ভেতরও। আলোচ্য পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে ইতিমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তারাও। এই দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না-এমন কথাও বলছেন এসব দলের কোনো কোনো নেতা। তবে প্রকাশ্যে এ ধরনের শক্ত ভাষা ব্যবহার করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে জোরেশোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো।