
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ভোট গণনা এখনো চলছে। নির্বাচনে চরম অব্যবস্থাপনা ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বয়কট করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বাম নেতৃত্বাধীন প্যানেলগুলো। কিন্তু ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাস ও স্বতন্ত্র সমর্থিত প্যানেল প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করলেও বয়কট করেনি।
এদিকে অব্যবস্থাপনার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরায় ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের পর নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। শেষ মুহুর্তে পদত্যাগ করা তিনজন শিক্ষক হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। পদত্যাগ করেছেন তারা সবাই বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও বর্তমান উপাচার্যের বিরোধী।
জানা যায়, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার পরও শিক্ষকরা রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নজিরবিহীন কর্মটি তারা সম্পন্ন করেছেন মূলত বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে বেকায়দায় ফেলতে।
অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেন বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলো- উপাচার্য, প্রাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বেশিরভাগ পদেই বিএনপিপন্থি শিক্ষকরাই রয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনেও জাতীয়তাবাদী শিক্ষকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরও নির্বাচন শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর তিনজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারার অভিযোগ তুলে।
এ পরিকল্পনার অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট নজরুল ইসলাম। তার প্রভাবে ওই কেন্দ্রে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। নির্বাচন ঘিরে এই জটিলতার গভীরে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগসংক্রান্ত পুরোনো দ্বন্দ্ব। যেসব শিক্ষক তখন ভিসি পদে নিয়োগ পাননি, তারাই পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্রে জড়ান। ভিসি হওয়ার পর অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রশাসনিক দায়িত্বে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দিলেও, যারা ভিসি হতে পারেননি, তারা ক্ষুব্ধ হন এবং জাকসু নির্বাচনকে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা নেন।
নির্বাচনের অনিয়ম সামনে এনে আন্দোলনের মাধ্যমে উপাচার্যকে বিতর্কিত করা এবং পদত্যাগে বাধ্য করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এছাড়া উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষক নিয়োগে হাত দেননি অধ্যাপক কামরুল আহসান। এজন্য বিএনপি শিক্ষকদের ওই গ্রুপটি বারবার উপাচার্যের উপর চাপ তৈরি করেন। কিন্তু তিনি নতিস্বীকার না করায় তারা নতুন ভিসি নিয়োগ করার নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক এসব অপতৎপরতায় যুক্ত আছেন। তারা নির্বাচনে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব তো পালন করেন নি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও ঘাটতি ছিল। নির্বাচন কমিশনে থাকা এই চক্রের সহযোগীরাই এসব অপকর্ম করেছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন করে কোন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, তাই এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের এই চক্রটি এর আগে জুলাই মাসে গণহত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত শিক্ষকদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না প্রমাণ করতে ও জাবি প্রশাসনকে বিপদে ফেলতে ছাত্রদলের মধ্যে গ্রুপিং করে ভোট বর্জন করানোসহ বিএনপিপন্থি কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে ভোট বর্জনের অভিযোগ রয়েছে বিএনপিপন্থি এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায় নি।
নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন এরকম কোনো কিছু ঘটে নি। কোনো একটি নির্দিষ্ট মহল এসব গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন হলের পোলিং অফিসারদের পদত্যাগের জন্য চাপ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো প্রমাণ বা তথ্য ছাড়া আপনি যে প্রশ্ন করেছেন আমি হলে সেটা করতাম না। আর এরকম কোনো কিছুই আসলে ঘটে নি এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।
নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের ভোট গণনা কার্যক্রম চলমান। আমরা খুব দ্রুতই ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করতে পারবো বলে আশাবাদী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, যত সমস্যা বা সংকটই থাকুক না কেন আমরা যেহেতু জাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছি, আমরা এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবো।