
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীকে আমরা এত বছর আশ্রয় দিয়েছি, আমাদের প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মন্ত্রীর স্থান দিয়েছি। আমাদের দলীয় অনেক নেতা ছিলেন, তারা মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু জামায়াতকে মন্ত্রী বানিয়েছি।
অথচ এখন তারাই বিএনপিকে আক্রমণ করছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার একটি ‘জুলাই সনদ’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে যে সনদ গৃহীত হবে, সেটি নাকি সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে। এটি তো কখনো হতে পারে না। সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে সংবিধানের ওপর প্রভাব বিস্তার করা গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, দেশবাসী একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভবিষ্যতের সংবিধান নির্ধারণ করবেন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসন দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
জামায়াতে ইসলামী ও নতুন গড়ে ওঠা কয়েকটি দলের সমালোচনা করেন হাফিজ উদ্দিন বলেন, একটি দল স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, আরেকটি ১৯৪৭-এর বিরোধিতা করেছে। এরা আজ জনগণের মালিক সাজতে চায়। তারা জানে নির্বাচনে তাদের কোনো সুযোগ নেই, তাই শুধু বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই ব্যস্ত।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের মানুষ চেনেই না। বিদেশি কনসেপ্ট। পাকিস্তানে নেই, ভারতে নেই, যুক্তরাজ্যে নেই, যুক্তরাষ্ট্রে নেই, কোথাও নেই। দুই একটা দেশে থাকতে পারে, আরও অনেক দেশে থাকতে পারে, যেখানে গণতন্ত্র, শিক্ষা ব্যবস্থা, কালচার অন্যরকম, তাদের শিক্ষাগত ব্যবস্থা অন্যরকম। তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করে থাকে।
‘বাংলাদেশের জনগণ এমন একজন নেতাকে খুঁজে বেড়ায়, যার কাছে তারা আশ্রয় নিতে পারে, যিনি তাদের আপদ-বিপদে রক্ষা করবেন, এলাকার উন্নয়ন করবেন। কিন্তু যদি পিআর পদ্ধতিতে এমপি হয়, তাহলে সে ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন হতে পারে যে এলাকা নির্বাচন এলাকা, সেখানকার কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। ’
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে যে সেনাবাহিনী দেখেছি, সেই সেনাবাহিনী চাই। হাসতে হাসতে জীবন দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। শুধু সেতু বানানো বা রাস্তা করার সেনাবাহিনী দিয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব নয়। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করা হবে, ছাত্রসমাজকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মিয়ানমারের হুমকি ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীকে আক্রমণাত্মক মনোভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের দিকে রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে।
বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, কয়েকজন বিদেশফেরত লোকের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে না। বাংলাদেশের মালিক জনগণ, জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে দেশ কেমন চলবে। বাংলাদেশকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র রোহিঙ্গা চাপিয়ে দিয়েছে, সীমান্তে হুমকি দিচ্ছে। আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পুরো জাতিকে মুক্তিযোদ্ধা জাতিতে রূপান্তর করব। সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের মানসিকতায় প্রস্তুত করব, শুধু ব্রিজ–কালভার্ট বানানোর কাজে সীমাবদ্ধ রাখব না।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদীন ফারুক, মজিবুর রহমান সরোয়ার ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।