
নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার এবং ব্যাচেলর অব টেকনোলজি (বিটেক) ভবন দখল করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতে অবকাঠামো সংকট দূরসহ ৩ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা ভবন দুটি দখল করে নেন। বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রায় ৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ওই দুটি ভবনে শতকোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে একে দখল না বলে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও পরিবহণ সংকট দূর করাসহ ক্যাম্পাসের আয়তন বৃদ্ধির দাবিতে ১০/১২ দিন ধরে আন্দোলন করছেন ববি শিক্ষার্থীরা। বুধবারও বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। রাত ৯টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী মিছিল ক্যাম্পাসের পাশে থাকা বরিশাল নভোথিয়েটার ও বিটেকের নির্মাণাধীন দুটি ভবন দখল করে। ভবন দুটিতে ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ভবন-৩’ এবং ‘আবাসিক হল’ লেখা দুটি সাইনবোর্ড ঝোলানোর পাশাপাশি এখন থেকে সেখানে ক্লাস ও একাডেমিক কার্যক্রম চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তর বরিশালের একাধিক সূত্র জানায়, নভোথিয়েটার নির্মাণ করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিটেক ভবনের নির্মাণ চলছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বিটেক ভবন নির্মাণে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। নভোথিয়েটার প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ৫শ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের বাইরে প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে সিভিল কনস্ট্রাকশন, টেলিকম এবং ইলেকট্রো মেকানিক্যাল খাতে। বৃহস্পতিবার দুটি ভবনে গিয়ে দেখা যায়, স্থায়ী কোনো দপ্তর বা আবাসনের ব্যবস্থা করা না হলেও যাতায়াত ও অবস্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দখলের জানান দিচ্ছে। সরকার দ্রুত সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত এ দুটি ভবনের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকবে বলেও জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর রাহাত হোসাইন ফয়সাল জানান, ‘একে দখল বলা হলে ভুল হবে। প্রতীকী প্রতিবাদ বলা যেতে পারে। নানা সংকটে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের আবেগের জায়গা থেকে ভবন দুটিতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এটা স্থায়ী কোনো বিষয় বা সমস্যা নয়। আশা করি, এ নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না।’ নভোথিয়েটার প্রকল্পের পরিচালক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুল বাশার বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরপরই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি, ২/৩ দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এদিকে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার একটি সমঝোতা বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকালে প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ভিসি ড. তৌফিক আলম এবং ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সালসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সুজয় শুভ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আয়তন বৃদ্ধির বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন উপাচার্য। তাছাড়া বিআরটিসি থেকে বাস নিয়ে দূর করা হবে পরিবহণ সমস্যা। এ দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ এদিকে ৩ দফা দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ এবং ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।