
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর কতটার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে। ২০ মে’র মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করতে চায় কমিশন। এরপর তিন থেকে চার দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করবে মতামত। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। ওই চিঠিতে বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। এসব বিষয় নিয়ে একটি রিসার্চ টিম কাজ করছে। তবে ঐকমত্য কমিশন কবে নাগাদ চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ।
এরই মধ্যে দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতি নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো কোনো দল থেকে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ ও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল সংস্কার প্রক্রিয়াকে চলমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা জানিয়েছে, নির্বাচিত সরকারের হাতে সংস্কার কার্যক্রম তুলে দেওয়া উচিত। আবার কোনো কোনো দল নির্বাচনের আগেই কিছু মৌলিক সংস্কারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। এরই অংশ হিসেবে বেশ কিছু সংস্কার অধ্যাদেশের মাধ্যমে করার সুপারিশ ও প্রস্তাব দিয়েছে দলগুলো। আবার সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে কয়েকটি দল। তাদের দাবি, সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার। ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেগুলো (সংস্কার প্রস্তাব) নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে এ বিষয়গুলো জাতির সামনে কেন তুলে ধরা হচ্ছে না, এটাই প্রশ্ন। অলরেডি সবাই (সব রাজনৈতিক দল) সাবমিট করে দিয়েছে, অনেক সময় চলে গেছে। আলোচনা শেষ। এক সপ্তাহের বেশি লাগে না কোথায় ঐকমত্য হয়েছে জানাতে। আমি বলব, জাতিকে জানান কোথায় ঐকমত্য হয়েছে? জাতি জানুক এবং ওই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সনদ সই করে দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই। এর বাইরে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।’ আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ থাকলেও জুলাইয়ের মধ্যে নিজেদের কাজ শেষ করতে চায় বলে জানিয়েছে কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা হলেও সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে ২০ মার্চ আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় ৩২টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করা হয়েছে। জামায়াতসহ কয়েকটি দল বাকি রয়েছে। নিজেদের কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে নেতৃত্ব দেওয়া সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের বেশির ভাগ প্রস্তাবের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো একমত পোষণ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কিছু বিষয়েও বেশির ভাগ দল একমত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপে আছি। তাদের বক্তব্য শুনছি। নোট নিচ্ছি। আমাদের একটি রিসার্চ টিম আছে। তারা দলগুলোর প্রস্তাব ও পরামর্শ নিয়ে কাজ করছে। ২০ মে’র পর মতামতগুলোর একটি বিশ্লেষণ তৈরি করতে পারব। এরপর বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। ওই চিঠিতে তাদের বিষয় উল্লেখ করে তার ওপর আলোচনার কথা জানানো হবে।’ দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কতদিনের মধ্যে শুরু হবে প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে দেরি করতে চাই না। আশা করি মে’র মধ্যেই আলোচনা শুরু করতে পারব। আগস্ট পর্যন্ত আমাদের কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। তবে পরিকল্পনা রয়েছে জুলাইয়ের শেষ দিকে কাজ শেষ করার।’
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এতে ১৬৬টি বিষয় স্থান দেওয়া হয়। দলগুলো মতামত দেওয়া শেষে এখন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করছে।