আসিফ শিবগাত ভূঁইয়া (Asif Shibgat Bhuiyan)
রিসেন্টলি জাতীয় নাগরিক কমিটির সামান্তা শারমিন তার একটি বক্তব্যের কারণে আলোচনায় এসেছেন। সেখানে তিনি নারী অধিকার প্রসঙ্গে পাকিস্তানী আমলে করা আইনের সংস্কার চেয়েছেন। তার এই কথার সমালোচনায় এরকমটা বলতে দেখা যাচ্ছে অনেককে যে পাকিস্তানি আমলে করা উত্তরাধিকার আইন মূলত ইসলামী আইন থেকেই নেয়া, সুতরাং একে বিরোধিতা করার অর্থ ইসলামী আইনের বিরোধিতা করা। তার এই কথাকে ইসলাম বিদ্বেষ বা নারীবাদীদের সাথে ইসলামপন্থিদের বিতর্ক হিসেবেও কিছু মানুষ ইঙ্গিত দিলেন।
দেখুন আমি ব্যক্তিগত ভাবে বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে বিস্তারিত যত বিতর্ক সেগুলো কম অনুসরণ করছি ফলে প্রতিটি বিতর্কের নুয়ান্স আমার জানা নেই। কিন্তু সামান্তার সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুবাদে কিছু কথা না বলাটা অন্যায় হবে।
২০২৪-এর শুরুতে সালে সামান্তা আমার একটি কুরআনের কোর্স করেন আরও অনেকের সাথে। ঐ কোর্সে সবচেয়ে থ্যট প্রোভোকিং প্রশ্নগুলো করতেন সামান্তা। আমি সাধারণত পরিমিতি বোধ হারিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না, তাই আশা করি বিশ্বাস করবেন যে সামান্তার মত কোয়ালিটি প্রশ্ন ও আলোচনা বাংলাদেশে কোনো ছেলে বা মেয়েকে করতে শুনিনি।
সামান্তা নিজেই একদিন আমাকে বললেন যে তিনি এবং তার স্বামী জাহিদ আমার সাথে দেখা করতে চান। আমরা একটি ক্যাফেতে দেখা করি। চারুকলায় পড়া এই দম্পতির স্কেপটিসিজম থেকে ইসলামে আসার গল্প সেদিন আমাকে সত্যিই অত্যন্ত আশ্চর্য করেছিলো। ওদের সাথে পরিচয় হলে আপনারা শুনে দেখবেন, অবাক হবেন।
জাহিদ এবং সামান্তার কথা থেকে একটি ব্যাপার আমি স্পষ্ট খেয়াল করেছি। তারা মোটেই তথাকথিত মডার্নিস্ট বা ফেমিনিস্ট নন। তাদের সাথে সেদিনের দীর্ঘ আলোচনায় যত ছুটকো ছাটকা কথা হয়েছে - বলতে দ্বিধা নেই - তাদের চারুকলার ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণেই হয়তো আমি এক্সপেক্ট করছিলাম যে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কিছু লিবারেল আইডিয়া চলে আসতেই পারে। আসেনি বরং বিভিন্ন প্রসঙ্গে তারা ইসলামের কোর চিন্তাগুলোকে নিজেরাই তুলে এনে তাদের নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়েছিলেন কেন সেগুলোর সাথে তারা একমত।
দেখুন আমি যেহেতু রাজনীতি থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখেছি তাই কিছু মৌলিক প্রশ্নে ফেইসবুক মত প্রকাশ ছাড়া রাজনৈতিক আলোচনায় বিস্তারিত ভাবে ঢোকার কাজ আমি একদম করতে চাইনা। কিন্তু আমি বর্তমান রাজনীতির অতি অস্থিরতা দেখে বিপন্ন বোধ করি। কারও ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতে ভুল থাকতে পারে, এমনকি সেই বক্তব্যে ইসলামিক প্রসঙ্গ আসলেও সমালোচনার জায়গা থাকতে পারে। সমালোচনার জায়গা থেকে সমালোচনা করুন। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। এত সহজে ইসলাম বিদ্বেষের দায় সমালোচনায় ঢোকাবেন না। কারণ এটি যে সামান্তার ক্ষেত্রে খাটে না আমি ভালো করেই জানি।
আমাদের রাজনীতিতে সুস্থ বিতর্ক হওয়া উচিৎ কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটি যেন ব্যক্তি পর্যায়ে উসকানি দিয়ে না হয় এবং মানুষের আপামর ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তার ওপর স্থূল সন্দেহ তৈরি করে না হয় এটি আমার অনুরোধ।
সামান্তা সহ বাংলাদেশের সকল তরুণ রাজনীতিবিদদের প্রতি আমার শুভ কামনা এবং দোয়া রয়েছে। আল্লাহ্ সবাইকে সঠিক পথে রাখুন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতে কার্যকরী ভূমিকা রাখার তাওফীক দিন।