Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠনের তোড়জোড় চলছে। এবারের আলোচনায় রয়েছে প্রধান চারটি জোটের নাম। জোট সম্প্রসারণ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে হচ্ছে আলোচনা। বিএনপি তার সমমনা দলের জন্য বেশ কয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। ইসলামি দলগুলোকে নিজ নিজ পক্ষে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রথমত- বিএনপি তার সমমনা জোট ও দল নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে দলটি মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। দ্বিতীয়ত- জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি জোট গঠনের ঘোষণা দেয়নি। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা করছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্য ইসলামি দলগুলো বৃহত্তর ইসলামি শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তৃতীয়ত- গণতন্ত্র মঞ্চ চেষ্টা করছে জোট সম্প্রারণের। চতুর্থত- বাম গণতান্ত্রিক জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এই দুই প্ল্যাটফর্মের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। চলতি মাসেই নতুন এই দলটির নাম এবং আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হতে পারে। নতুন এই দল সংসদ নির্বাচনে একক, না জোটগতভাবে অংশ নেবে- তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের আন্দোলনে যেসব দল রাজপথে ছিল আমরা তাদের নিয়ে নির্বাচন এবং পরবর্তীতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠক করে চলেছি।

গণতন্ত্র মঞ্চ সম্প্রসারণ বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, পরিবর্তিত বাস্তবতায় রাজনৈতিক লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যাব। নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত; রাষ্ট্রব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারসহ এই বিষয়গুলো অর্জনে সব রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কাজ করব। জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য জোট সম্প্রসারণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাব।    

বাম গণতান্ত্রিক জোট বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেছেন, আমাদের পার্টি দীর্ঘদিন ধরে ভোট ও জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত বলয়ের বাইরে বামপন্থিদের বৃৃহত্তর বলয় বা বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বামপন্থিদের বাইরেও দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল দলগুলোকে একত্রে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাসদ; ফ্যাসিবাদবিরোধী বামজোট; ঐক্য ন্যাপকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কিছু কর্মসূচি পালন করেছি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বামপন্থি ও ইতিবাচক শক্তিগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এই জোট ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে।

ইসলামী দলগুলো নিয়ে নির্বাচনি জোট গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বিগত আন্দোলনের সময়ও আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ক কাছাকাছি হয়। আমাদের স্পিরিট ছিল ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, জুলুমের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও ইসলামী শক্তির ঐক্য। ঘোষণা না দিলেও ঐক্য শুরু হয়ে গেছে। সামনে নির্বাচন আছে। নির্বাচনি দাবির সঙ্গে সংস্কারও আছে। এসব দাবির ক্ষেত্রেও আমরা একসঙ্গেই আছি। তিনি বলেন, আসলে কার সঙ্গে কার জোট হবে (কোন দলের সঙ্গে কোন দলের) বা জোট না হলে কোন প্রক্রিয়ায় সমঝোতা হবে- এসব বিষয় বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা হচ্ছে। রোডম্যাপ ঘোষণা হলেই সব কিছু চূড়ান্ত হবে।

নতুন দল কোন জোটে যাবে-  এ ব্যাপারে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুশফিক-উস-সালেহীন বলেন, দলের আত্মপ্রকাশের পর এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ যখন সামনে আসবে, তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখনো বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় নেই। 

ইসলামি দলগুলো নিয়ে নির্বাচনি জোট গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, বিভিন্ন দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের বৈঠক চলছে। আমাদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেকেই বসতে চায়। আমরা এখনো বসছি না। আমরা ইসলামি দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য চাই। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা হলে এটি চূড়ান্ত রূপ নেবে।