Image description

দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন মাদারীপুরের সাইফুল ইসলাম। দেশে ফিরে বেশ কিছু দিন অবস্থানের পর ফের বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। সরকারি নীতি অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) হুবহু তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন তিনি। পাসপোর্টটি দ্রুত সময়ে হাতে পাওয়ার জন্য সুপার এক্সপ্রেসে আবেদন করেন। দুই দিন পর ঢাকার একজন এসআই পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ফোন দেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে দেখা না করে অন্য সময়ে দেখা করতে চান সাইফুল। এসআই বলেন, সমস্যা নেই, এই নম্বরে (এসআইয়ের মোবাইল নম্বর) হোয়াটসঅ্যাপ আছে। আপনার সব কাগজপত্র পাঠিয়ে দেন। এসআইয়ের কথামতো প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তাকে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর এসআই বলেন, এই নম্বরে বিকাশ করা আছে। সাইফুল তাকে (এসআই) ১ হাজার টাকা বিকাশ করেন।

কিন্তু এসআই বলেন, এটা হয় নাকি? পরে সাইফুল তাকে আরও ১ হাজার টাকা বিকাশ করেন। পরে তিনি ওকে লিখে সাইফুলকে  মেসেজ দেন। এর এক দিন পর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর থেকে আরেক এসআই মর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুলকে ফোন দেন। তার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চাওয়া হলে তিনি ওই এসআইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে সব ডকুমেন্ট পাঠিয়ে দেন। এর পর এসআই ফোন করে বলেন, কিছু খরচপাতি দেন। সাইফুল তাকে ১ হাজার টাকা বিকাশ করেন। পরদিন ওই এসআই আবার ফোন দেন এবং টাকা চান। আবারও সাইফুল ১ হাজার টাকা বিকাশ করেন। পরক্ষণেই সাইফুলকে এসআই হোয়াটসঅ্যাপে লেখেন, নট এনাফ, প্লিজ সেন্ড মোর। দ্রুত পাসপোর্টটা হাতে পেতে আরও ১ হাজার টাকা পাঠান সাইফুল। এরপর মাদারীপুরের ওই এসআই লেখেন, থ্যাংকস। ঢাকা ও মাদারীপুরে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে মোট ৫ হাজার টাকা খরচ করেন সাইফুল।

বরিশালের আদনান রহমানের কর্মস্থল ঢাকায়। তিনি পরিবারসহ বিদেশে বেড়াতে যাবেন। তার পাসপোর্ট থাকলেও স্ত্রীর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।

ঢাকায় টাকা ছাড়া ভেরিফিকেশন হলেও গ্রামের বাড়িতে যান এক পুলিশ কর্মকর্তা। সেখান থেকে ওই কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি চা-নাশতা খাওয়ার জন্য টাকা চেয়ে বসেন আদনানের কাছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন আদনান। পরে সে ওই কর্মকর্তার বিকাশ নম্বর চান। ওই পুলিশ কর্মকর্তা এক বিকাশ নম্বর দিলে আদনান ১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পেয়েছেন কি না জানতে ওই নম্বরে ফোন দেন আদনান। জানতে পারেন নম্বরটি বিকাশের দোকানের এজেন্ট নম্বর। ওই এজেন্ট দোকানদার আদনানের কাছে জানতে চান এটা কোন স্যারের জন্য পাঠিয়েছেন, আদনান নাম বললে, দোকানদার বলেন ঠিক আছে। এভাবে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য বিকাশ বা নগদ অ্যাপসে টাকা নেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট প্রার্থী সরাসরি দেখা করলে নগদ টাকা নিয়ে নেন। যে যা দেন নিয়ে নেন তদন্ত কর্মকর্তারা, কিন্তু কম হলে চেয়ে নেন। পাসপোর্ট প্রার্থীদের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এ ধরনের ঘুষ দেওয়া নিত্যদিনের ঘটনা। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে এ ধরনের ঘুষ এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট।

পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ (এসবি) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বা ঢাকার বাইরে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য এসআই বা এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি তদন্তের জন্য তাদের কোনো খরচ দেওয়া হয় না। এমনকি যাতায়াত ভাড়াও দেওয়া হয় না। দায়িত্ব এলে তারা পালন করেন। 

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অনুসন্ধান করা হবে। তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।