এবারের গ্রীষ্মে আবারও বাংলাদেশ তীব্র লোডশেডিংয়ে পড়তে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জড়িতরা এ আশঙ্কা করছেন। গত কয়েকদিনে দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা হয়েছে। তার পরও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং হচ্ছে। কখনো বিদ্যুতের এ ঘাটতি ১০০ মেগাওয়াটের বেশি ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসছে গ্রীষ্মে সঠিকভাবে জ্বালানি সরবরাহ করা না গেলে লোডশেডিংও সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে না। পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা সরকারের কাছে যে টাকা পান তা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা এখনই করতে হবে। তা না হলে গ্রীষ্মের শুরুতেই ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে।
মার্চে দেশে গরম পড়তে শুরু করবে। একই মাসে শুরু হবে পবিত্র রমজান। শিগগিরই শুরু হচ্ছে সেচ মৌসুম। এ তিনে মিলে এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের বাড়তি চাপ থাকবে। এজন্য বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হলে লোডশেডিং বাড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা এবার গরমে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন। আর চাহিদা ও সরবরাহে পার্থক্য বেশি হলে ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া না পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তারা প্রাথমিক জ্বালানি কিনতে পারছেন না। দিনদিন সরকারের কাছে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছেই। গ্যাসের সংকট তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে উচ্চ দামের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালাতে হবে। এতে সরকারের ব্যয় ও লোকসান দুটোই বেড়ে যাবে। এ ছাড়া লোডশেডিং হলে মাঠ পর্যায়ে সেচেও ডিজেলচালিত সেচপাম্পের খরচ বাড়বে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘আমাদের ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সরবরাহ হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদি আসছে গ্রীষ্মে সঠিকভাবে জ্বালানি সরবরাহ করা যায় তাহলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এখন বকেয়া পরিশোধের জন্য টাকা জোগাড় করা মূল বিষয়। বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি এবং বকেয়া পরিশোধের জন্য টাকা বরাদ্দ করলে লোডশেডিং যৌক্তিক অবস্থায় থাকবে। তবে তা কখনো লোডশেডিংমুক্ত হবে না।’
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপ্পা)-এর সভাপতি কে এম ডেভিড হাসনাত গতকাল বলেন, ‘সরকার খরচ বাঁচাতে এখনো তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছে না। গরম এখনো না পড়ায় অনেক জায়গায় লোডশেডিং দিচ্ছে সরকার। কিন্তু গরম যখন পুরো পড়বে তখন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে আমাদের কোনো লেভারেজ নেই। আমাদের কাছে এখন সর্বোচ্চ এক মাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর মতো জ্বালানি আছে। দুই মাস ধরে পিডিবির কাছ থেকে পাওনা না পাওয়ায় অর্থসংকটে এলসি খুলতে বা জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না। আশঙ্কা করছি, এবার গ্রীষ্মে গ্রাহককে তীব্র লোডশেডিংয়ে ভুগতে হবে।’