Image description

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। আওয়ামী লীগের আমলে করা এ হাসপাতালটি নির্মাণের সময় বলা হয়েছিল- চিকিৎসা খরচ থাকবে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। একই ছাদের নিচে সর্বাধুনিক বহুমুখী বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা চলবে। উদ্বোধনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি দেশের একমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত রাজধানীর এই হাসপাতালটি। জনবল সংকটে দীর্ঘদিন ধরে কার্যত অকেজো হয়ে আছে এই হাসপাতালের উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগের আওতায় কিছু রোগী ওয়ার্ড ও কেবিনে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল চালু না হওয়ার পেছনে জনবল সংকটের কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, শিগগিরই বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুমোদনের পর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

বিএমইউতে বর্তমানে ৬৫টি মেডিকেল অফিসারের পদ খালি রয়েছে, পদোন্নতির কারণে ২২৬টি মেডিকেল অফিসারের পদ হোল্ড আছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৩৫৮টির মতো পদ এখনো রয়েছে। বিএমইউ’র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিএমইউ’র হাজার হাজার রেসিডেন্ট, তাদের থাকার জন্য কোনো হল নেই। চিকিৎসকদেরও থাকতে হয় বাইরে। হল সুবিধা না থাকার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় কষ্ট করে থাকতে হয় এবং যাতায়াতের অসুবিধা হয়। এতে সেবায়ও বেশ বিঘ্ন ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ই আগস্টের পর সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো ঠিকমতো সংস্কার করা হয়নি। কোরিয়ার অর্থায়নে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল করা হয়েছে, এখনো পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না দেশের জনগণ। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট-ওয়ার্ড বয়সহ সব পদে নিয়োগ করে পুরোপুরিভাবে হাসপাতাল চালু করা হোক। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এখানে চিকিৎসা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশি চিকিৎসকদের নিয়ে আসার বিষয়েও ভেবেছে বিশ্ববিদ্যালয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে বিদেশনির্ভরতা কমবে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি চিকিৎসকদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। এরপরও এখানে এখন নিয়মিত রোগী দেখছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা। অর্থাৎ, তারা বহির্বিভাগে দুই শিফটে রোগী দেখছেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রোগীরা বহির্বিভাগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারছেন। চিকিৎসকদের কনসালটেশন ফি বাবদ রোগীদের ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। তাছাড়া এখানে বিশেষায়িত রোগের জন্য উন্নতমানের একাধিক সেবা সেন্টারও চালু রয়েছে।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, এখানে বর্তমানে জরুরি বিভাগে সরাসরি রোগী এলে তাদের ভর্তি নেয়া হয় না। তবে, বহির্বিভাগে ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে খুব সামান্য সংখ্যক রোগীকে ওয়ার্ড কিংবা কেবিনে ভর্তি নেয়া হয়। রোগীদের জন্য এখন ৩০টির মতো শয্যা, ১৮টি আইসিইউ এবং ১২টি কেবিন শয্যা চালু রাখা হয়েছে। গত রোববার সর্বশেষ হাসপাতালের ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২৪ জন রোগী ভর্তি ছিল ওয়ার্ডে।       

সরজমিন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নিচতলায় বহির্বিভাগে অপেক্ষা করছেন রোগী ও স্বজনদের অনেকে। চিকিৎসার জন্য সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঘোষণার জন্য। অত্যাধুনিক ফাস্ট ফুডের দোকান, বেসরকারি ব্যাংকের শাখা, চালু আছে চলন্ত সিঁড়ি, সুপরিসর লিফটসহ সবই আছে হাসপাতালে। হাসপাতালের তিনটি ফ্লোরের বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকরা বসছেন রোগী দেখতে। তবে নিচতলায় ভিড় কিছুটা থাকলেও উপরের তলার কক্ষ ও ফ্লোরগুলো একদমই সুনসান। নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছেন রোগী-স্বজনরা। এর বাইরে বাড়তি কোনোরকম ঝামেলা দেখা যায়নি, হাসপাতাল জুড়ে একরকম ভুতুড়ে নীরবতা। দুপুরের দিকে বিভিন্ন সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী অলস বসেছিলেন। কোনো কোনো বিভাগে কোনো রোগী না থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে ছিলেন সেখানে। কোথাও কোথাও নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী থাকলেও আদতে রোগী বা সেবা না দেয়ায় তাদের বেশির ভাগ সময়ই কাটে অলস বসে।

হাসপাতালের প্রথমতলায় রয়েছে- বহির্বিভাগ রোগীদের জন্য বসার স্থান, দোকান,  হাসপাতালের রিসিপশন, রেডিওলোজি বিভাগ, হাসপাতালের ফার্মেসি, অবজারভেশন কক্ষ, ট্রমা চিকিৎসা বিভাগ। দ্বিতীয়তলায় রয়েছে- কিডনি ডিজিস অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, নার্স বিভাগ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, ডেলিভারি রুম, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ইত্যাদি। তৃতীয়তলায় রয়েছে- কার্ডিওভাস্কুলার অ্যান্ড স্ট্রোক সেন্টার, সিসিইউ, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, প্যাথলজি ল্যাব, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়েটিক ডিজিজ, হেপাটোলজি অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার ইত্যাদি। চতুর্থতলায় দেখা গেছে, এমআইসিইউ ইউনিট, এসআইসিইউ, সিএসডি ইত্যাদি। সচল আইসিইউ সার্ভিস রয়েছে। এর উপরের তলাগুলোতে রয়েছে কেবিন এবং ওয়ার্ডসমূহ। কিছু ওয়ার্ডে জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীও রয়েছেন।      

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তি পরে একটা নো-কস্ট এক্সটেনশনের (অতিরিক্ত খরচ হবে না, এমন মেয়াদ বৃদ্ধি) মাধ্যমে আরও প্রায় এক বছর চার মাস সময়কালের জন্য তাদের মেয়াদ আছে। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।