রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছে বস্তিবাসী। এক বেলার খাবার জোগাতে সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে এখানকার শিশু থেকে বয়স্ক মানুষকে। সেই সঙ্গে তারা আছে নিরাপত্তাহীনতায়। অনেকের ঘরের মালপত্র চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর সেখানকার আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। এর পর থেকেই বস্তিজুড়ে চলছে হাহাকার।
বস্তির বাসিন্দা রহিমা আক্তার গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগুন লাগার পর একমুহূর্ত সময় পাই নাই। ঘরের একটা সুতা বা টাকা রক্ষা করতে পারি নাই। শুধু নিজের জীবন নিয়া পালাইছি। এখন খাওন-পরনের জন্য আমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট নাই।
আমরা সরকার ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চাই। অন্তত দুই বেলা যেন খেয়ে বাঁচতে পারি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বস্তিতে বর্তমানে শুধু বাড়ির মালিকরা রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে সব হারানোর পর বেশির ভাগ ভাড়াটিয়া বস্তি ছেড়ে চলে গেছে। অন্যদিকে ঘরের মালিকদের অনেককে নতুন করে ঘর বানানোর প্রস্তুতি নিতেও দেখা গেছে।
বস্তির দুটি বাড়ির মালিক আব্দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বস্তির ঘর ভাড়া খুব কম। ওই টাকা দিয়েই আমার সংসার চলে। পর্যাপ্ত টাকাও জমা নেই। নতুন করে ঘর তুলতে ঋণ করা ছাড়া উপায় নেই। তবু পরিবার নিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। তবে বারবার আগুন লেগে সেই স্বপ্নগুলো পুড়ে যায়।’
আগুনে ঘরবাড়ির সঙ্গে পুড়েছে আসবাবসহ পোশাক ও নগদ অর্থ। দেখা গেছে, বস্তির চারপাশ একেবারেই ফাঁকা। কোথাও কোথাও এক ইঞ্চির ইট দিয়ে ঘেরা ঘরের সীমানা। ছাদহীন ঘরের চারপাশে কাপড় টানানো। এর ভেতরেই রাত ও দিন কাটাচ্ছে বস্তিবাসী। সব হারিয়ে অপেক্ষা খাবার, পানি ও পোশাকের। দিনের বিভিন্ন সময় সরকারি, বেসরকারি ও এনজিওর লোকজন ত্রাণ নিয়ে বস্তিতে প্রবেশ করছেন। তাঁদের দেখতেই বাইরে ছুটে আসছে শিশু-বৃদ্ধ সবাই। গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বস্তিবাসীদের ত্রাণ দিতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে নবদত্ত নামের একটি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে বিভিন্ন জিনিস।
বনানী থানার ওসি রাসেল সরওয়ার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, আগুন নির্বাপণের পর খোলা আকাশের নিচে থাকায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে পুলিশ। দিন ও রাতে পালাক্রমে পুলিশ সদস্যরা সেখানে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখনো ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলছে।
আজ শুক্রবার ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম থেকে তিন হাজার ব্যক্তির মধ্যে বিস্কুট বিতরণ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।