চট্টগ্রাম শহর থেকে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য পটিয়া সরকারি কলেজে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দেওয়া উপহারের বাসটি এখন পরিত্যক্ত। বিএনপি সরকারের আমলে বাসটি কলেজের জন্য দেওয়া হলেও ২০০৯ সাল থেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ১৬ বছর বাসটি গ্যারেজবন্দি রয়েছে। বর্তমানে বাসটি একেবারে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
বাসটিকে চোরের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে গ্যারেজের দরজায় স্থায়ী কংক্রিট দেয়াল দিয়ে রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, বাসটিতে খালেদা জিয়ার নাম থাকায় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী বাসটি চলতে দেয়নি।
জানা যায়, পটিয়া সরকারি কলেজ বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কলেজ আসা-যাওয়ার জন্য কলেজের নিজস্ব কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেয়। যদিও সম্প্রতি পটিয়া সরকারি কলেজকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করেছে সরকার। দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়াতে পটিয়া সরকারি কলেজে এইচএসসি, অনার্স, ডিগ্রি ও স্নাতকোত্তর করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে ২০০৩ সালে পটিয়া সরকারি কলেজকে একটি বাস দেওয়া হয় । গাড়িটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সময় গাড়ির গায়ে ‘প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপহার’ লিখে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিন মাসও বাসটি চলতে দেওয়া হয়নি। বাসটি মেরামত না করে শুধু খালেদা জিয়ার নাম থাকায় তখনকার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ইশারায় বাসটি গ্যারেজবন্দি করে রাখা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পটিয়া সরকারি কলেজের পূর্ব গেটের গ্যারেজের ভেতরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে বাসটি। গ্যারেজের ছাউনিও ভেঙে গেছে। গ্যারেজের চারিদিকে পাকা দেয়াল। যেন জেলখানায় বন্দি বাসটি। কলেজের স্নাতক গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাওয়াল উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম শহর থেকে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে ক্লাস করতে হয় আমাকে। যদি কলেজের নিজস্ব বাস থাকত, তাহলে আমার ভাড়া বাবদ অনেক টাকা সঞ্চয় হতো। আরেক শিক্ষার্থী সাহাব উদ্দীন শিহাব বলেন, লোহাগাড়া থেকে তাকে আসতে হয় পটিয়া সরকারি কলেজে। যদি দক্ষিণ চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক কলেজের বাস দেওয়া হতো, তাহলে যাতায়াত করাটা সহজ হতো।
পটিয়া উপজেলার বিএনপির নেতা গাজী মনির বলেন, আমরা কলেজে পড়াশোনা যখন করতাম, তখনই বাসটি শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য খালেদা জিয়া উপহার দেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্যের ইশারায় বাসটি গ্যারেজবন্দি করা হয়। যার কারণে বাসটি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। পরিত্যক্ত বাসের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউছুপ আলী আমার দেশকে বলেন, আমি কলেজে যোগদান করার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় বাসটি পেয়েছি। বাসটির বর্তমানে যে অবস্থা তা কোনো কাজে আসবে না। সেটি যে মেরামত করব, সে অবস্থায়ও নেই। গাড়িটি আমরা বিক্রি কিংবা অন্য কিছু করতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াও করা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরা গাড়িটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাব।