১ থেকে ১২তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনধারী ও ১৮তম নিবন্ধনধারীদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলমান রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের কার্যক্রমের বিষয়ে অবস্থান পরিস্কার করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তারা বলছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষক নিবন্ধন, প্রত্যয়ন ও নিয়োগ সুপারিশ প্রদানে তাদের কাজ চলমান রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এই দপ্তর (এনটিআরসিএ) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। এতে ৯টি পয়েন্টে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে এনটিআরসিএ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষক নিবন্ধন, প্রত্যয়ন ও নিয়োগ সুপারিশ প্রদানের কাজ করছে। এ পর্যন্ত ১৮ পর্যায়ে নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন এবং ৬টি নিয়োগ সুপারিশ প্রক্রিয়াকরণের কাজ করা হয়েছে। ২০১৫ এর পূর্ব পর্যন্ত এনটিআরসি’র দায়িত্ব কেবল নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের মধ্যে সীমিত ছিল। পরবর্তীতে নিয়োগ সুপারিশ প্রদানের দায়িত্বও এনটিআরসিএ'র ওপর অর্পন করা হয়।’
‘১ম থেকে ১২তম নিবন্ধনের নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের অনুকূলে কেবল প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয়েছে। নিবন্ধনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করার সুযোগ ছিল এবং ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫ এর ১০(২) অনুযায়ী “কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, নিবন্ধিত ও প্রত্যয়নকৃত না হইলে কোন ব্যক্তি কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হইবেন না।” এ কার্যালয় হতে ১ম থেকে ১২তম প্রার্থীদের অনুকূলে সরবরাহকৃত প্রত্যয়নপত্র শুধুমাত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হতো। এই প্রত্যয়নপত্র কোনোভাবে চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করে না। ১ম থেকে ১২ তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব এনটিআরসিএ'র ছিলনা বিধায় ১ম-১২তম নিবন্ধনপ্রার্থীগণের বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ সংক্রান্ত দাবির কোন আইনগত ভিত্তি নেই।’
‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত ২০১৫ সালের পরিপত্রের মাধ্যমে এনটিআরসিএ-কে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার দায়িত্ব অর্পন করার পর নিবন্ধিত প্রার্থীগণ কয়েকটি রিট মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যয়নপত্রের মেয়াদ, ফলাফল প্রকাশের তারিখ হতে ০৩ (তিন) বছর বহাল রেখে সিভিল আপীল নং-৭১/২০২৩ এর রায় ঘোষণা করেন। সিভিল আপীল নং-৭১/২০২৩ এর রায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থীগণ কর্তৃক সিভিল রিভিউ পিটিশন নং-১৫/২০২৫ দায়ের করা হয়েছে। সিভিল রিভিউ পিটিশনটি চলমান রয়েছে। এছাড়া, রিট মামলায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য ৩৫ বৎসর বয়স নির্ধারণ করা হলে তা চ্যালেঞ্জ করে অনেকগুলো রিট মামলা দায়ের করা হয়। রিট মামলাগুলোর সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপীল নং- ৩৯০০/২০১৯ এ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৩৫ বৎসর বয়স বহাল রেখে মহামান্য আপীল বিভাগ গত ১১ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে রায় প্রদান করেন।’
‘১৩তম ও ১৪তম ব্যাচের নিবন্ধনধারীগণও নিয়োগের দাবি করে অনেকগুলো রিট মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলোর সিভিল রিভিউ পিটিশন নং ১৯৫/২০২০। উক্ত রিভিউ মামলার রায়ে প্রার্থীগণের প্রত্যয়নপত্রের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ হতে ০৩ (তিন) বৎসর বহাল থাকবে মর্মে রায় প্রদান করা হয়েছে।’
‘রিট ও আপীল মামলার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ হতে ০৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং প্রার্থীগণের বয়স নিয়োগ সুপারিশের জন্য ৩৫ বৎসর এর মধ্যে হতে হবে।’
‘১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল গত ০৪ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশ করা হয়। ৬০,৬৩৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। গত ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে নিয়োগ সুপারিশ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে শূন্যপদের বিপরীতে ৪১,৬২৭ জন প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়।’
‘বর্তমানে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত শূন্যপদ সংগ্রহ করে ডিসেম্বর ২০২৫ এ নিয়োগ সুপারিশ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।’
‘এনটিআরসিএ বিদ্যমান আইন বিধি এবং মহামান্য আপীল বিভাগ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত আদেশ সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সফ্টওয়ারের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে প্রবেশ পর্যায়ে এ পর্যন্ত ০৬ টি গণবিজ্ঞপ্তি এবং বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মোট ১,৭৭,৫৭১ জন প্রার্থীকে শিক্ষক পদে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ সুপারিশ করেছে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ করতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।’
‘অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ না করার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’