Image description
► দেশে ১৩ ঘণ্টায় তিনবার অনুভূত ► উচ্চ ও মাঝারি ঝুঁকির ভবন চিহ্নিত করতে হবে

এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশে মোট সাতটি এবং রাজধানী ঢাকায় পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর এবং পরদিন শনিবার ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়। ২৬ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে ২৭ নভেম্বর বিকাল পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার একটি ঢাকায় অনুভূত হয়।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মুহূর্তে আতঙ্ক নয়, বরং সতর্কতা প্রয়োজন। যেহেতু দেশে দীর্ঘদিন ধরে বড় ভূমিকম্প হয়নি এজন্য ভূমিতে বিশাল আকারের শক্তি জমে আছে। এই জমে থাকাটা বড় ‘হুমকি’। তারা এও বলছেন, শক্তি বিবেচনায় ২১ নভেম্বরের ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি মাঝারি হলেও এটি ছিল শক্তিশালী। আর শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর এক থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ছোট ছোট ভূমিকম্পের মতো ‘আফটার শক’ হতে পারে। তবে এ মুহূর্তে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ভূমিকম্প মোকাবিলায় দেশবাসীকে সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগরবাসীকে ভূমিকম্প হলে বাইরে বের না হয়ে দুই-এক কদমের ভিতরে যে যেখানে থাকবেন তার মধ্যেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। ভূমিকম্পের বিভিন্ন সতর্কতা এবং ভূমিকম্প-পরবর্তী যার যার দায়িত্ব পালনের জন্য দ্রুত উদ্যোগ হিসেবে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি ন্যাচারাল ডিজাস্টার গেম তৈরি করা যেতে পারে। ওয়ার্ডভিত্তিক উচ্চ ও মাঝারি ঝুঁকির ভবনগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যে ভবনগুলো রেট্রোফিটিং করা সম্ভব সেগুলো করতে হবে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে এর বেশির ভাগই একই স্থান থেকে উৎপত্তি হয়েছে। গত ২১ ও ২২ নভেম্বর এবং ২৭ নভেম্বরের ভূমিকম্প একই এলাকায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারের ব্যবধানে হয়েছে। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া ভূমিকম্প এই বার্তা দিচ্ছে যে, এই সাবট্রাকশন জোনে বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে। আমরা পরিমাপ করেছি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি এখানে জমা হয়ে আছে। এই শক্তি আজ বা আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে বের হবেই। যত দেরি হবে তত ভয়াবহ আকারের ভূমিকম্প হবে। এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ২১ নভেম্বর নরসিংদীতে দুটো প্লেট আনলকড হয়ে সামান্য কিছু শক্তি বের হয়েছে। তবে যা বের হয়েছে তা পুরো শক্তির দশমিক ১ শতাংশও বের হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী আহমেদ আনসারী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২১ নভেম্বরের ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে এগুলো সব ‘আফটার শক’। তবে ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

এক সপ্তাহে ৭ ভূমিকম্প : গতকাল বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নরসিংদীর ঘোড়াশালে ছিল এর উৎপত্তিস্থল। এর আগে বুধবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ২৯ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে বঙ্গোপসাগর ও ৩টা ৩০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। গভীর রাতে বঙ্গোপসাগর এলাকায় আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। সিলেটের ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৪ মাত্রা। উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুরে। এর আগে ২২ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় তিনবার ভূমিকম্প হয়। সকালে নরসিংদীর পলাশে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প ছাড়াও এই দিনে ১ সেকেন্ডের ব্যবধানে ঢাকায় আরও দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এদিন রাজধানী বাড্ডায় সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৫ সেকেন্ডে উৎপন্ন হওয়া ভূকম্পনটির রিখটার স্কেলে ছিল ৩ দশমিক ৭ মাত্রার। এর ঠিক ১ সেকেন্ড আগে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় নরসিংদীতে। আর ২১ নভেম্বর সকালে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল ৫ দশমিক ৭ মাত্রার। এতে দেশে শিশুসহ ১০ জন নিহত ও ৬ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।