Image description
► ইনফেকশন ডেকে আনছে বিপদ ► পরিচ্ছন্নতায় জোর গবেষকদের

যশোরের মনিরামপুরের ব্যবসায়ী ফরহাদ আলী (৩২) গ্রামের সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে আহত হন। স্থানীয় হাসপাতালে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসতে বলেন চিকিৎসক। ফরহাদের দুলাভাই আজিমউদ্দিন বলেন, গত ১৬ অক্টোবরে দুর্ঘটনায় আহত হয় ফরহাদ। এরপর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) অর্থাৎ পঙ্গু হাসপাতালে আনলে পায়ের হাড় কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় অপারেশন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা যায় ওই জায়গায় পুঁজ জমছে, তীব্র ব্যথা। চিকিৎসক দেখে বলেন পায়ে ইনফেকশন হয়েছে। এখন পা হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।   

দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে বিভিন্ন জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার অভাবে বিপত্তি বাড়ছে। ইনফেকশনের কারণে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যথাযথ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন হাসপাতালই হয়ে উঠছে জীবাণুর কারখানা। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসুস্থতাকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং হাসপাতালে ভিড় না করে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে সেবা নিতে হবে।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর ডা. তানজীর আহমেদ শুভ বলেন, আমরা গত ২০২২ সালের জুলাই থেকে এ বছর পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্স করেছি। সাধারণভাবে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলতে ত্বক, নখ কিংবা শরীরের বাইরের অংশে ছত্রাক সংক্রমণকে বুঝি। এ ইনফেকশনগুলো হচ্ছে ত্বকের উপরিভাগের ছত্রাক সংক্রমণ। আর আমরা কাজ করছি যে ফাংগাল ইনফেকশন শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা সিস্টেম যেমন রক্ত, ফুসফুস, ব্রেইন ইত্যাদির ভিতরে ঘটে সেগুলো। এ ধরনের সংক্রমণ সাধারণত সুস্থ মানুষের হয় না। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে (যেমন ক্যানসার রোগী, আইসিইউর রোগী, অঙ্গপ্রতিস্থাপন করা রোগী) এ ধরনের জটিল ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সার্ভেইল্যান্স বাংলাদেশে এটাই প্রথম। আমরা দেখতে পাই যে, এ ধরনের পরিবেশে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশ ভয়াবহ হয়ে থাকে। আইসিইউতে ক্যান্ডিডা অরিস নামে একটি ছত্রাকের ইনফেকশন পাচ্ছি, যাকে ছত্রাকদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসেবে মনে করা হয়। এ ইনফেকশনে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি। আইসিইউতে থাকা নবজাতকদের মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ক্যান্ডিডা ব্ল্যাংকি নামে একটি ছত্রাক নবজাতকদের রক্তে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়া নবজাতকদের মৃত্যুহার এনআইসিইউর গড় মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, বাজারে যে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধগুলো সহজলভ্য সেগুলো এই দুই ধরনের ফাঙ্গাসকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মারতেই পারছে না। কার্যকর যে ওষুধগুলো আছে সেগুলো দামি, সহজে পাওয়া যায় না। সেগুলো বেশি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে কাজ নাও করতে পারে। তাই আমাদের মতে আইসিইউতে ছত্রাক সংক্রমণ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (আইপিসি) শক্তিশালী করা। আমাদের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটি হাসপাতালের আইপিসি ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে একটি হাসপাতালে চলতি বছরে ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেকটা কমে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে হাত ধোয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমেই এর বিস্তার কমানো সম্ভব বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে আইসিডিডিআরবির গবেষণার মাধ্যমে।’

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১২ নম্বর নারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর শয্যায় বসে স্বজনদের কেউ ভাত খাচ্ছেন, কেউ ফল খাচ্ছেন, অনেক শয্যায় রোগীর চারপাশে গোল হয়ে বসে গল্প করছেন।

শরীরের বেশ কিছু জায়গায় টিউমার অপারেশন করা হয়েছে পপি খাতুনের (৪৫)। অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেওয়ায় আবার ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তার চারপাশে বসে গল্প করতে দেখা গেল চারজন স্বজনকে। একজন পাউরুটি, কলা খাচ্ছেন বেডে বসেই। এ বিষয়ে দায়িত্বরত নার্স বলেন, রোগীর স্বজনদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বললে তারা অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে বাজে আচরণ করেন।