Image description
সারাদেশে আমনের বাম্পার ফলন

সারাদেশে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হেমন্তের এই সময়ে দেশের সর্বত্রই এখন ধান কাটার উৎসব চলছে। নতুন ধানের গন্ধে ম-ম করছে কৃষকের উঠোন। কৃষক-কৃষানীরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সারা দেশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। দেশের হাট-বাজারগুলো এখন নতুন ধানে ভরে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশের কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার ফলে আমন উৎপাদনে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে সারাদেশে ফলন ভালো হওয়ায় তা সামগ্রিকভাবে আমন উৎপাদন বাম্পারই বলা যায়। তবে উৎপাদনের সঠিক তথ্য পেতে ধান কাটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে হাট-বাজারগুলোতে ধানের যে দাম পাচ্ছেন, তাতে তারা খুশি। বাজারে এখন ধান বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা মণ। গত বছরেও প্রায় এধরনের দামই ছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এবার ২০২৫-২০২৬ মৌসুমে সারা দেশে ৫৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, নরসিংদী এসব জেলায় আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছর ধরে দেশে ধারাবাহিকভাবে হেক্টর প্রতি আমনের গড় উৎপাদন বাড়ছে। গত ২০২৪- ২৫ মৌসুমে হেক্টর প্রতি আমনের গড় ফলন হয়েছে ২.৯৫ টন, যা আগের বছরের ২০২৩-২৪-এর গড় ২.৮১ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হেক্টর প্রতি ২.৬৯ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২.৬১ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২.৫৫ টন উৎপাদন হয়েছে।

সারাদেশে আমন উৎপাদনের চিত্র উঠে এসেছে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে। নিচে সে সব প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে অন্যতম সপ্নের ফসল আমনের বিস্তৃর্ন সোনালী ক্ষেতে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা। নতুন ধানের গন্ধে চারিদিকে অন্যরকম গন্ধ। ব্যাস্ত কৃষক ধান কাটাই শ্রমিক আর বাড়ির খৈলানে কৃষান বধুর ব্যাস্ততা। এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে (রাজশাহী, নওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর) আমন আবাদ হয়েছে চারলাখ সাড়ে দশ হাজার হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে রাজশাহীতে সাড়ে চুরাশী হাজার হেক্টর, নওগায় একলাখ ছিয়ানব্বই হাজার ছয়শো হেক্টর, নাটোরে প্রায় সাতাত্তর হাজার হেক্টর ও চাপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে চুয়ান্ন হাজার হেক্টর। আবহাওয়া অনুকুল থাকা বিশেষ করে ভার বৃষ্টি হওয়ায় ভাল আবাদের প্রত্যাশা। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা বর্তমান পরিস্থিতিতে ছয়লাখ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে। যদিও শেষ মুহুর্তের বৃষ্টিতে বেশ কিছু জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার পরিমান সব মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির আবাদ। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে নওগা জেলায়। মাঠ পর্যায়ে খোজ নিয়ে জানাগেল এ পর্যন্ত যা কাটাই মাড়াই হয়েছে তাঁতে দেখা যায় বিঘা প্রতি ধান পাওয়া যাচ্ছে ষোল থেকে আঠারো মন। আর এই ভর মওসুমে ধান বিক্রি হচ্ছে এগারো থেকে বারোশ টাকা প্রতিমণ। ললিত নগরের ভুষনার জোতদার সদিদ সদরুল্লা জানালেন আবাদ পরিস্থিতি মোটামুটি ভাল। জোতদার থেকে কৃষক সবার মুখে হাসি। এবার প্রতি বিঘা আবাদে খরচ হয়েছে আট হাজার টাকা। এখন কাটাই মাড়াই খরচ। ধানের দাম আরেকটু বেশী হলে ভাল হয়।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের ঘরে ঘরে এখন আনন্দ। উৎসবের আমেজ গ্রামে গ্রামে। চলছে ধানকাটা সেইসাথে নবান্নের উৎসব। এবার ইঁদুর কিংবা পোকা-মাড়কের উৎপাত নেই। কৃষি শ্রমিকেরও নেই কোন সঙ্কট। ফলে ফসল ঘরে তোলাতেও কোন বিড়ম্বনা নেই। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, ফলনেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবছর রেডর্ক পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ফসল কাটা হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৭০৯ হেক্টর জমির। তাতে ফলন পাওয়া গেছে ছয় লাখ ২৯ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন (চাল)। হেক্টর প্রতি ফলন (হাইব্রিড) কোন কোন এলাকায় চার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। আর উফশী জাতের ফলন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৩.১০ মেট্রিক টন। সারা দেশের মতো এই অঞ্চলেও কৃষকদের কাছে বড় ফসল হিসাবে পরিচিত আমন। আমনের চাষাবাদ ব্যয়ও কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এবার যথাসময়ে সার, বীজ সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া ছিলো অনুকূলে। বৃষ্টিপাতও হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। পোকা-মাকড়ের উৎপাতও ছিলো না। ফলে এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভাল ফলন হয়েছে।

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন আবাদ কিছুটা কম হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ জমির আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। ২০ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন সংগ্রহ অভিযানও শুরু করেছে সরকার। হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন ধান ও চাল। ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। হাটবাজারে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। কৃষকেরা বলছেন, এবার পুরো মৌসুম জুড়ে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচের খরচ প্রায় লাগেনি। তেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় কীটনাশকও কম ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বগুড়া কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর। তবে বাম্পার ফলনে এই ঘাটতি পুষিয়ে গেছে।

ময়মনসিংহ থেকে মোঃ শামসুল আলম খান জানান, ময়মনসিংহ অঞ্চলে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে। ধারাবাহিক রোদ-বৃষ্টি, অনুকূল আবহাওয়া, এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের নিবিড় তদারকির ফলে বছরের অন্যতম সফল মৌসুম পার করছে এ অঞ্চলের কৃষক সমাজ। বিগত কয়েক বছরের দুর্যোগ ও উৎপাদন ব্যয়ের চাপ সামলে এ মৌসুমে মাঠজুড়ে নেমেছে উৎসবের আমেজ। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহের বিভিন্ন গ্রামজুড়ে ধান কাটার ব্যস্ততা, আঙিনায় মাড়াই-ঝাড়াই আর নতুন ধান ভরার আনন্দ। কৃষকদের হিসেবে, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফলন হয়েছে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বীরগুছিনা গ্রামের কৃষক সিতেন চন্দ্র বসাক বলেন, এবার ধান খুব ভালো হয়েছে। খরচ উঠিয়ে লাভ থাকবে বলে মনে হচ্ছে। একই গ্রামের আরেক কৃষক জানান, শ্রমিক সংকট থাকলেও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দ্রুত কাটার কাজ করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আমন মৌসুমে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ২,৬৪,১১১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৯১,১৫৭ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে, যা মোট আবাদি জমির প্রায় ৪০ শতাংশ। ফলনও সন্তোষজনক। হাইব্রিড জাতের ফলন প্রতি হেক্টরে ৩.৭৫ মেট্রিক টন, যেখানে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ফলন প্রতি হেক্টরে ২.৮০ মেট্রিক টন এবং গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৩.২৭ মেট্রিক টন।

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। অনুকূল আবহাওয়া, সঠিক সময়ে কৃষি প্রযুক্তি সহায়তা ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সফলতার কারণে এ বছরের আমন মৌসুমকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৭৮ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমি, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সমান। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫১ মেট্রিকটন। এরই মধ্যে ফসল কাটার অগ্রগতি হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬১ মেট্রিকটন।

বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন কর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষি যোদ্ধাগন। দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী ধানের ক্ষেতে এখন কৃষকের প্রাণভরা হাসি সবারই নজর কাড়ছে। ভাটি এলাকা বিধায় এ অঞ্চলে আমনের আবাদ বিলম্বিত হওয়ায় কর্তনও কিছুটা পরে শুরু হয়ে থাকে। তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে ইতোমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ৫ ভাগের কিছু বেশি আমন কর্তন সম্পন্ন হয়েলেও ৯০ ভাগেরও বেশি ফসল এখনো মাঠে। চলতি খরিপ-২ মৌসমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৯লাখ হেক্টরে আবাদকৃত জমি থেকে ২৪ লাখ টন আমন চাল ঘরে তোলার লক্ষ্যে এখন মাঠে ব্যস্ত কৃষিযোদ্ধাগন। তবে মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে আমন বীজতলার পাশাপাশি রোপা আমনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে কৃষকের মাঝে নানা ধরনের শংকা কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে আসায় এবার ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষিবীগদগনও। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী ও অতিরিক্ত পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম সিকদারের মতে এবার আমনের জন্য অত্যন্ত ভাল পরিবেশ বিরাজ করছে। উৎপাদনও এযাবতকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছতে পারে।

দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, কৃষি নির্ভর দিনাজপুর অঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়া আবহাওয়া ছিল অনুকুল। তবে ভারী বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত না হওয়ায় ফলনের উল্লেখযোগ্য কোন হয়নি বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে বৃহত্তর এই জেলা থেকে সতের লক্ষ টনের বেশী আমন ধান ( চাল আকারে ) উৎপাদন হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যাক্ত করেছে। ইতিমধ্যেই আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটা মারা শুরু হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। তবে মূল জাতের আমন কাটা মারার পরই উৎপাদনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একটি সুত্র মত প্রকাশ করেছে। বছরের ভাতের চাহিদা পূরনে আমন ধান কৃষকের মুল ভরসা। এই ধান দিয়েই সাধারনত সংসারে খাদ্য চাহিদা পূরন করে থাকে এতদঅঞ্চলের মানুষ। আর ইরি-বোরো ধান হচ্ছে অর্থনৈতিক ফসল। তাই আমন ধানের ভাল ফলন সারা বছর খাদ্য চাহিদা পূরণে নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে কৃষকেরা ৫ হাজার ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষ করেছেন, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৯১০ হেক্টর।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, আমনে সিলেটজুড়ে আশাতীত ফলন হয়েছে। প্রকৃতির অকৃপণ করুনায় ফলনে গোলা ভরবে কৃষকের। তাই কৃষকের দেহ-মনে হাসির ঝিলিক। কৃষি সংশ্লিষ্টরাও বেজায় খুশি, শুকরিয়া। ছিল না অনাবৃষ্টি-অতিবৃৃষ্টি। প্রাকৃতিক দূর্যোগও কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ তুলেনি। সিলেট বিভাগের ৪ জেলাতে-ই সুবজ আমনে ফুটছে এখন সোনালী হাসি। পোকামাকড়ের আক্রমণও সেই হাসি ম্লান করতে পারেনি। শুরু হয়েছে সীমিত পরিসরে ধান কাটা। দেখতে দেখতে শুরু হবে ধান কাটার উৎসব। কৃষি সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বিভাগে চলতি বছর রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লক্ষ ১৭ হাজার ১৯০ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৪ লক্ষ ১৬ হাজার ৮০১ হেক্টর। বিভাগে মোট ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে নির্ধারণ। তবে ফলনের আশাতীত প্রকাশে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের।

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না জানান, এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার আমন ধানের কাটা-মাড়াইয়ের তুমুল ব্যস্ততা চলছে। ধানের বাম্পার ফলনের কারণে কৃষকের ঘরে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। অগ্রহায়ণ মাসে মাঠজুড়ে সোনালি ধানের সমাহার ও তার সুগন্ধে গ্রামাঞ্চল মুখর হয়ে উঠেছে। পাকা ধানের দৃশ্য ও আঙিনায় ছড়িয়ে থাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ কৃষক পরিবারদের মনে আনন্দের ছোঁয়া দিয়েছে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, খরিপ-২ মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ৮৮,৯২০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমিতে সম্ভাব্য ৪,৮৪,৪৮৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪,৮৩,৩৪৮ মেট্রিক টনের কাছাকাছি, আর অর্জিত উৎপাদন হয়েছে ৪,৮৪,৪৮৯ মেট্রিক টন, অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।

রংপুর থেকে হোলিম আনছারী, এবারে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় রংপুরের সর্বত্রই আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও কাটা শুরু হয়েছে আমন ধান। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর রংপুর অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ধান উৎপাদন হবে। সর্বত্রই আমনের ফলন ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা আছেন ফুরফুরে মেজাজে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার ৬ লাখ ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর জামিতে আমনের আবাদ হয়েছে।

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, জেলার কৃষি অর্থনীতিতে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে এবারে আমনের বাম্পার ফলন। এই বিপুল ফলন কৃষকদের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করেছে। ফুটিয়েছে কৃষকদের মুখে হাসি। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা আমন ধানের বাম্পার ফলন উপভোগ করছেন। এই বছর ফলন আশানুরূপ হওয়ায় আমন কৃষকদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরা জানান, এবারের মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইঁদুর ও পোকায় ধানের খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। সব কিছু মিলিয়ে এবারের মাঠে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার ধানের শিষগুলো যেমন পুষ্ট হয়েছে, তেমনি চিটার পরিমাণও কম। ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকদের অমন বাম্পারের স্বপ্ন সফল হবে।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, জেলার ৯ উপজেলাই নতুন ধান তুলছেন কৃষকরা। চারিদিকে নতুন ধান তোলার মৌ-মৌ ঘ্রান ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গা। কৃষকের উঠান ভরে গেছে নতুন ধানে। বহু বাড়ির আঙ্গিনায় উঠছে উৎসব। কৃষাণী মনে আনন্দ। পাশাপাশি ইঁদুরের উৎপাতেই কৃষকুল অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। দেশে অব্যাহত বৃষ্টিতে ক্ষুদার্ত ইঁদুর পেটের খাবার যোগাড় করতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সোনালী রংয়ে ভরে উঠা আমন ধানের ক্ষেতে। ইঁদুরের দল কৃষকের ধান ক্ষেত ঢুকে ধান কেটে মাটিতে বড় বড় গর্ত টেনে মাটির নিচে সৃষ্টি করছে গুপ্তধন। ইঁদুর নিধনে ক্ষেতে ফাঁদ পেতেও ইঁদুরের বংশধর কমাতে পারছেন না কৃষক।

মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী জানান, জেলায় এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক। তবে শ্রমিক সংকট ও ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রতি বছর শ্রমিক সংকট থাকায় কৃষকরা সময়মতো মাঠ থেকে ধান ঘরে তোলতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে কৃষকদের পূরোদমে যান্ত্রিক নির্ভর হলে খরচ কমার পাশাপাশি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: জালাল উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ হাজার ৩৫ হেক্টর। চাষাবাদও হয়েছে ৯৮ হাজার ৩৫ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে করে ফলন ভালো হয়েছে। পোকা মাকড়ের আক্রমন না থাকায় ধানে চিটা হয়নি। সার ও বীজ কৃষকরা সময়মতো পেয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে।
জয়পুরহাট থেকে মশিউর রহমান খান জানান, চলতি মৌসুমে জয়পুরহাট জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জয়পুরহাটের কৃষি বিভাগ বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া, মানসম্মত বীজ ব্যবহার এবং কৃষি বিভাগের তদারকি সব মিলিয়ে বাম্পার ফলন হয়েছে। জয়পুরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক, এ কে এম সাদিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণ অর্জিত হলেও ঘূর্ণিঝড় মুনতার সৃষ্ট বৃষ্টিতে ১১৩ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান সে দিকে সরকার কাজ করছে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে

কিশোরগঞ্জ থেকে মো. জাহাঙ্গীর শাহ্ বাদশাহ জানান্, জেলায় আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ব্যস্ত কৃষক কৃষানীরা। চলতি বছরে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ধানের দামও ভালো রয়েছে। আশানুরুপ দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। জেলার কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার কটিয়াদী উপজেলার ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫০ হেক্টর বেশি। সরেজমিনে গিয়ে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে পাকা আমন ধান। ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান জানান, হেমন্তের শুরুতেই মাগুরার মাঠে মাঠে সোনালী পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। কৃষক কৃষানিরা ও কাক ঢাকা ভোর থেকে মাঠে মাঠে দলে দলে এক হয়ে শুরু করেছেন ধান কাটা। কয়েক দিন মাঠে রেখে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা। আবার অনেক কৃষক মাঠেই ধান মাড়াই করে গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে ফিরছেন। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলে ধান কাটা। মাগুরা সদরের নালিয়ার ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক সমীর শেখ জানান, দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তিনি। ধানের ফলন এবার ভালো হলেও অনেক ধানে চিটা দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন। ইতিমধ্যে অর্ধেক ধান ঘরে তুলছেন। আশা করছেন কয়েকদিনের মধ্যে বাকি ধানও ঘরে তুলবেন। মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম জানান, এবার জেলায় ৬১ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে জেলায় এ বছর দুই লাখ ২৯ হাজার ২০৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুসা মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে আবাদ অনুকূলে থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধানের প্রত্যাশিত ফলন না পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর দুশ্চিন্তা। মাঠজুড়ে সবুজ-সোনালি ধানের সৌন্দর্য থাকলেও শেষ হিসাব মেলাতে না পারায় কৃষি পরিবারের মুখে আনন্দের বদলে বেড়েছে হতাশা। কৃষকদের অভিযোগ রাসায়নিক সার, মানসম্মত বীজ ও কীটনাশকের বাজারে নৈরাজ্যের কারণে উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়েছে সিন্ডিকেটের কারণে। পোকামাকড়ের আক্রমণ সামাল দিতে কীটনাশক বালাইনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খরচ আরও বাড়ে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ব্যয়ও যুক্ত হয়েছে। ফলে বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগ জানায়, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত সারাদেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও আমন ক্ষেতে বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। যেসব জমিতে পানি জমে ছিল বা ধানের গাছ হেলে পড়েছিল, সেসব মাঠে ফলন কম হচ্ছে।

নরসিংদী থেকে কাউছার মাহমুদ জানান, আবহাওয়া চাষের অনুকূলে থাকায় নরসিংদীতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রোপা আমনের ফলন হয়েছে। গুণগত মান বিবেচনায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকেরা ব্যাপক আনন্দ-উৎসাহ নিয়ে আধুনিক যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন) ব্যবহার করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ভালো খড় পেতে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ কৃষক হাতে ধান কেটে মাড়াই করছেন। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ৫ মেট্রিক টন। মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কৃষকেরা কাস্তের পাশাপাশি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করে দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ১৮-২০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। মাঠজুড়ে পাকা ধানের আভা। স্বল্প সময়ে পুরো ফসল উঠবে কৃষকের ঘরে।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাসুদ রানা পলক জানান, জেলাজুড়ে চলছে আমন ধান কাটা মাড়াই এর মহোউৎসব। কৃষক নতুন ধান কাটা, মাড়াই ও সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সাথে ধানের জমিতে আগাম জাতের অন্য ফসল চাষেরও প্রস্তিুতি নিচ্ছেন। এ বছর ধানের ফলনে বেশ খুশি চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছেন কাঁচা ধান শুকিয়ে বিক্রি করলে ধানের ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া এসময়ে ধান বিক্রির টাকা অন্য ফসল উৎপাদনে সহায়ক। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসূমে জেলায় আমন ধানের চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০০ হেক্টর। এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের আগাম জাতের ধানের চাষ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর।

ঝিনাইদহ থেকে আসিফ কাজল জানান, জেলায় এবার আমন ধানের এমন বাম্পার ফলন হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। জেলার দিগন্তজোড়া মাঠ জুড়ে এখন সোনালি ধানের ঝিলিক যেন প্রকৃতির সোনালি ফসলের উৎসব। কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে নবান্নের আনন্দ, মুখে ফিরেছে আশা ও স্বস্তি। গ্রামাঞ্চলজুড়ে উৎসবের আমেজ চড়িয়ে পড়েছে। নবান্নের গন্ধে মাতোয়ারা গ্রামীন পরিবেশ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ঝিনাইদহে এক লাখ চার হাজার পাঁচ’শ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।

বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, উপকূলীয় জেলা বরগুনায় এ বছর রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, সময়মতো বৃষ্টিপাত, মানসম্মত জাতের ব্যবহার এবং কৃষি বিভাগের নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে এ সফলতা এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উৎপাদন ব্যয়ের চাপ ও বাজার অনিশ্চয়তার মাঝে এমন ফলন কৃষকদের মুখে এনেছে স্বস্তির হাসি। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। কিন্তু লক্ষ্য ছাড়িয়ে কৃষকেরা আবাদ করেছেন ৯৯ হাজার ১৪১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন, যা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

লক্ষ্মীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, লক্ষ্মীপুরে এবার আমন ধানের ভাল ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। গেল বছর বন্যার কারণে অমনের আবাদ করতে পারেনি অধিকাংশ কৃষক। কিন্তু এবার সেটা পুষিয়ে নিতে পারবে তারা। কৃষকরা জানায়, যেভাবে ধানের ফলন হয়েছে, ধান কাটার অগে যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ে তাহলে আশানুরূপ ফলন ঘরে তুলতে পারবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জহির আহমেদ বলেন, আমনের আবাদ ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলাতে ৮০ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।

শেরপুর থেকে এস.কে. সাত্তার জানান, এ জেলায় শুরু হয়েছে আগাম আমন ধান কাটার উৎসব। আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। তবে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কৃষকের ঘরে ওঠে। কিন্তু এবার অনেক কৃষক আগাম জাতের আমন ধান আবাদ করেছেন। সেসব ক্ষেতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। পোকার আক্রমণ আর নানা রোগবালাইয়ের পরও এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। বর্তমানে বাজারে ধানের নায্য মূল্য পেলে ভাল লাভবান হওয়ার আশায় মুখ ভরা হাসি নিয়ে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত এই জেলার কৃষকেরা। শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শেরপুর জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার ৬শ ৯৩ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৯৩ হাজার ৭শ ২০ হেক্টরে।

নাটোর থেকে মো. আজিজুল হক টুকু জানান, জেলায় চলতি খরিপ-২ মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলাতে ৭৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমনের আবাদ হয়েছে মোট ৭৬ হাজার ৯৯৭ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১২ হেক্টর বেশি। নাটোরের গ্রামে ও বিলের সব জায়গাতেই আমনের আবাদ হয়। কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তোলার আনন্দে এখন বিভোর। কোথাও কোন ফুরসত নেই। গ্রামের ছেলে যুবক থেকে মহিলা সবাই ধান কাটা, মাড়াই ও বাছাই করে ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ এটা অগ্রাহায়ণ মাস। চলছে নবান্ন। ঘরে ঘরে পিঠা পুলি খাওয়ার যেমন আনন্দ আছে তেমনি এই ধান বিক্রি করে ঋণ শোধ করার তাড়াও তেমন আছে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলায় রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী ৩ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে। সরকারি প্রনোদনা এবং কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ দেওয়ায় জেলার এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী ৩ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়।

লালমনিরহাট থেকে দুলাল হোসেন জানান, এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় মাঠজুড়ে সোনালি রঙের মনোরম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে। ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ ইউনিয়ন গুলোর কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে পেকে যাওয়া ধান মাঠজুড়ে সোনালি রূপ ধারণ করেছে। কৃষক ও শ্রমিকরা হাতে কাঁচি নিয়ে ধান কাটছেন। কেউ মাথায় বা ঘাড়ে করে ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। আবার কেউ ট্রলি কিংবা ভ্যানে করে ধান বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। কৃষকদের অনেকের সাথে কথা বলে জানাগেছে,তাদের অনেকে ধান কাটার লোকের অভাবে ক্ষেতের ধান কাটতে না পারায় এবারে বিএনপি‘র সহযোগী সংগঠন কৃষকদল ক্ষেতের ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে পৌছে দিয়েছে। কৃষকদলের এমন ভুমিকার বিষয়টি বিশেষ করে এলাকায় বেশ প্রশংসার দাবীদার হয়েছে।

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, গফরগাঁও পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে রোপা আমন কাটার ধুম লেগেছে। বিগত বছরের তুলনায় এবারে আমন ধান উৎপাদন ভাল হয়েছে। গফরগাঁও উপজেলার ৯নং পাঁচবাগ ইউনিয়নের উত্তরহারিনা গ্রামের মো. কামরুল হাসান জানান, চলতি মৌসুমে আমন ধান ক্ষেতে মাজরা পোকার কারনে ফলন কম হয়েছে। কোন ধরনের মেডিসিন দিয়েও কাজ হয়নি। গফরগাঁও উপজেলার ২নংবারবাড়িয়া ইউনিয়নের পাড়াভুম গ্রামের মেসার্স নদী বাংলা অটো রাইস মিলের মালিক মো, আবদুল কাশিদ জানান , চলতি মৌসুমে নানান কারনে আমনের ফলন কম হয়েছে। চিকন ধান প্রতিমন (৪০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২শত টাকা। মোটা ধান প্রতিমণ (৪০ কেজি) বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ১শত টাকা দরে।