Image description
নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ও পুনর্মূল্যায়ন । মাঠ পর্যায়ে ফের যাচাই করছে একাধিক টিম বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা হলে কঠোর শাস্তি ।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদে প্রার্থী ঘোষণার আগে একাধিক টিম দিয়ে চালানো হয় জরিপ, সংগ্রহ করা তথ্য। প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় তাদের গুলশানে ডেকে দলের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়ার মতো ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া যারা মনোনয়ন পাবেন এবং যারা বঞ্চিত হবেন তাদের প্রত্যেকের করণীয়ও বুঝিয়ে দেন তিনি। সে সময় তারেক রহমানের কাছে সকলেই যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার সঙ্গেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে (পরে একটি স্থগিত করা হয়) ধানের শীষের প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে ধীরে ধীরে এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক আসনে দ্বন্দ্ব-বিরোধ, বিদ্রোহ, কর্মসূচি, অপপ্রচারসহ নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।

আবার মনোনয়ন প্রাপ্তদের যেভাবে বঞ্চিতদের কাছে ছুটে যাওয়া, তাদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সেটিও মানেননি অনেকে। ফলে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও তৃণমূলের কোন্দলে অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। আর এটি নিরসনে দলের সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এজন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ কিছু আসনে যারা মনোনয়ন পেয়েছে মাঠপর্যায়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে বলে দলটির সূত্রে জানা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য না করলেও যাচাই-বাছাইয়ের পর ঘোষিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা। আবার যেসব আসনে কেবল বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা করা হচ্ছে সেসব আসনের নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘোষিত ২৩৬ আসনের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক আসনে প্রার্থী নিয়ে বিরোধ চলছে। প্রায় প্রতিটি আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত সকল প্রার্থী ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। আবার অনেক স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ ও প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। তাদের অভিযোগ, এসব আসনে দীর্ঘদিন ধরে যারা স্বৈরচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থেকেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে এবং ওই সময়ে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তন করে তাদের মধ্য থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের পক্ষেই সকলে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। অন্যথায় দলীয় প্রার্থীর বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিচ্ছেন অনেকে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, প্রার্থী ঘোষণার আগে গুলশান কার্যালয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যে বৈঠক হয় সেখানে তারেক রহমানের আবেগঘন বক্তব্য সকলের হৃদয় স্পর্শ করে। সকলেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণাও দেন। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পর ৩ নভেম্বরই বিভিন্ন আসনে সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের এসব বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। কয়েকজন নেতা বিরোধপূর্ণ আসনে গিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টাও করেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। তারপরও বিরোধপূর্ণ আসনের প্রার্থী ও বঞ্চিতদের ডেকে পৃথকভাবে কথা বলছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেশ কিছু আসনের পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার জন্য স্বতন্ত্র একাধিক টিম ও সংস্থা দিয়ে পুনরায় তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেন। এসব টিম এখন কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট হাতে পেলেই কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা। আবার যেসব আসনে কেবল বিরোধিতার স্বার্থে নেতারা বিরোধিতা করছেন এবং দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন সেসব আসনের ওই সব নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করবেন দলীয় প্রধান।

দলের ঘোষিত প্রার্থী নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিরোধের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির মতো এত বৃহৎ দলে প্রতিটি আসনে কমপক্ষে ৫-১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। সেখান থেকে একজনই মনোনয়ন পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই অন্যরা বঞ্চিত হয়েছেন। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের সাথে বৈঠকে স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন দল ক্ষমতায় গেলে সকলকে মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে, আর যদি ক্ষমতায় না যায় তাহলে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সেই কথা সকলের স্মরণে রাখা উচিত।

তিনি বলেন, ঘোষণার সময়ই বলে দেয়া হয়েছিল এটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে স্বাভাবিকভাবেই আরো কিছু যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে। যদি কোনো আসনে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হয় দল সেটি করবে।

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই চট্টগ্রামে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং বিভিন্ন জায়গায় টায়ারে অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দলের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ করে এসব মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি করতে শুরু করেন। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে একজন নিহত হবার পর স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সেখানকার উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান। এর আগে ২০১৮ সালে সেখানে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাজী নাজমুল হোসেন। এবার নাজমুল মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের একটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি মিজানুর রহমান সিনহা। দল মনোনয়ন ঘোষণার পর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে।

ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও জুলাই আন্দোলনে নিহত মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের পাশে থেকেছেন এবং বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বাধিক মামলার শিকার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এস এম জাহাঙ্গীর। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

ফেনী-২ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য ক্রিকেটীয় স্টাইলে ‘রিভিউ’ আবেদন করে আলোচনায় এসেছেন ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল। এর বাইরে সাতক্ষীরা, ভোলা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলার অনেক আসনেই দলের ভেতর থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বিএনপি প্রাথমিক তালিকায় স্থান পাওয়া প্রার্থীরা।

নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে- সেই আলোচনা আছে বিএনপির ভেতরে। ফেনী-২ আসনে সাবেক এমপি জয়নাল আবদীনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ বলে জানিয়েছেন জেলার নেতারা। হবিগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী এস এম ফয়সাল বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কুষ্টিয়া ও বরিশালের দু’জন প্রার্থীও বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন দাবি করা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই। আবার বিএনপির সমমনা দলের একজন নেতার জন্য ঢাকার একটি আসন দলটি রাখলেও নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে বলে তিনি এখন আর ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নন বলে জানা গেছে। আবার ওই নেতার জেলার আসনে ইতোমধ্যেই বিএনপি দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তার আগে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষও হয়েছে।

দিনাজপুর-২ আসনে সাদিক রিয়াজ চৌধুরীর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল, কাফনের কাপড় পরিধান করে মানববন্ধন, ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন মোজাহারুল ইসলাম, বজলুর রশিদ কালু ও মনজুরুল আলমের অনুসারীরা। শুরু থেকেই সেখানে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এ ছাড়া দিনাজপুর-১ ও দিনাজপুর-৪ আসনেও মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে।

নীলফামারী-৪ সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জে বিএনপির সাবেক এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র মরহুম আমজাদ হোসেন সরকার ভজের ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াদ আরফান সরকার রানাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তার অনুসারীরা। রংপুর-২ আসনে মোহাম্মদ আলী সরকারকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দোসর অভিহিত করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ইউনিয়নের নেতারা। এজন্য কর্মসূচিও পালন করছেন তারা।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে আপন দুই ভাই মনোনয়ন পাওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন দলের একটি অংশ। মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেন লিপিকে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে চিলমারী উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা না থাকায় গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী শামীম কায়সার লিংকনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিলসহ ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, শামীম কায়সার লিংকন গত ১৮-১৯ বছর দেশের বাইরে অবস্থান করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও আস্থার ঘাটতি রয়েছে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামেও তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না বলে জানান তারা। তাদের দাবি, সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত লিংকনের পরিবর্তে ত্যাগী, নির্যাতিত ও জনপ্রিয় নেতাদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। তা না হলে আসনটি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্ক করেন তারা।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী সংসদকে বৈধতা দেয়া এবং কোনো কর্মসূচিতে না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলামের প্রার্থিতা পরিবর্তন চায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির মরহুম নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন (পুতুল)। এতে ক্ষুব্ধ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম (টিপু) ও প্রার্থী ফারজানা শারমিনের আপন ভাই ইয়াছির আরশাদ (রাজন)। দু’জনেই এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের প্রার্থী এম এ হান্নান ২০২৪ সালের আমি-ডামির নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হওয়া একরামুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ অভিযোগ করে তার প্রার্থিতা বাতিলের দাবি তুলেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। গোপালগঞ্জ-২ আসনে ডা. কে এম বাবর আলীকে এলাকায় অপরিচিত ও অজনপ্রিয় হিসেবে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বরং তার বিপরীতে দীর্ঘদিনের পরিচিত জনপ্রতিনিধি এম এইচ খান মঞ্জুকে প্রার্থী হিসেবে চান স্থানীয়রা।
নরসিংদী-৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী পরিবর্তন চায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। এ আসনে তারা ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। তার অনুসারীরা বলছেন, ১৭ বছর মামলা-হামলায় জর্জরিত ছিলেন তারা।

ময়মনসিংহ-৯ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ইয়াসের খাঁন চৌধুরীকে। সেখানে তার মনোনয়ন বাতিল করে পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন বঞ্চিত ও বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী চারজন প্রার্থী। তাদের মধ্য থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা। এছাড়া এই দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তুলনামূলক কম জনপ্রিয় হওয়াতে ইয়াসের খাঁন চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম-৪ ও ১৬, সিলেট-৬, সাতক্ষীরা-২ ও ৩, ঠাকুরগাঁও-৩, জয়পুরহাট-১ ও ২, ময়মনসিংহ-৩, ৬ ও ১১, কুমিল্লা-৫, ৬ ও ১০, রাজশাহী-৪ ও ৫, রাজবাড়ী-২, নওগাঁ-১, ৩ ও ৪, পাবনা-৪, মৌলভীবাজার-২ আসনসহ আরো কয়েকটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন চলছে।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দল আগেই বলেছে, এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়, সম্ভাব্য তালিকা। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, সাধারণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তাসহ নানা দিক বিশ্লেষণ করেই প্রার্থী দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোথাও দল পরিবর্তন দরকার মনে করে নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করবে। কিন্তু সবকিছুর ওপর নিজেদের ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা এবং দলের স্বার্থ বিবেচনায় রাখা উচিত। এছাড়া শেষ মুহূর্তে সবাই দল ও দেশের স্বার্থে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধানের শীষকে জয়যুক্ত করার জন্য কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রিজভী।