Image description
বিএমইটিতে বিভিন্ন মামলার জট হাজার হাজার ভিসার মেয়াদ শেষের আশঙ্কা জনশক্তি ব্যুরোতে মানববন্ধন ও শুনানি আজ

বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগের জটে পড়ে দুই শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে হাজার হাজার বিদেশ-গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে এসব রিক্রুটিং এজেন্সির নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা না হলে জনশক্তি রফতানিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এতে রেমিট্যান্স খাতেও ভাটার টান দেখা দিতে পারে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক নাম প্রকাশ না করার শতে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিএমইটি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মামলা চলমান থাকার ঠুনকো অভিযোগে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম গত তিন মাস ধরে বন্ধ রেখেছে। হাজার হাজার কর্মী বিদেশে প্রেরণকারী বড় বড় রিক্রুটিং এজেন্সি লাইসেন্স নবায়ন করতে না পারায় তাদের আওতায় ভিসাপ্রাপ্ত কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদেশগমনেচ্ছু কর্মীরা প্রতিদিন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অফিসে ধর্ণা দিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বায়রার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জনশক্তি রফতানির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি একাধিক জটিলতার সম্মুখীন। সেক্টাবিরোধী আইন ও বিধি বাতিল, লাইসেন্স নবায়নে অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা, সউদী আরবে বহির্গমন ছাড়পত্র জটিলতাসহ বিভিন্ন সংকট উত্তরণে আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ বিএমইটি কার্যালয়ের সামনে শ্রমবাজার রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান আতিক ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের আহ্বানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। অপর দিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের শুনানি কার্যক্রম শুরু হবে।

একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক ও বায়রার একজন সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি হাজার হাজার কর্মী এমনকি লক্ষাধিক কর্মীকে বিদেশে পাঠিয়েছে। তারা বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা এবং অভিযোগ থাকতেই পারে, আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সরকার রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে নানা কারণে মামলা কিংবা অভিযোগ থাকলেই সংশ্লিষ্ট মামলা নিষ্পত্তি বা রায় না হওয়া পর্যন্ত এজেন্সির অধীনের বিদেশগমনেচ্ছু কর্মীদের ভিসার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। কোনো অভিযুক্ত এজেন্সি আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তার বৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা কোনো যুক্তিযুক্ত নয়। এতে জনশক্তি রফতানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এসব রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নবায়ন দেয়া না হলেও জনশক্তি রফতানির সর্বোচ্চ দেশ সউদী আরবে কর্মী প্রেরণ হুমকির সম্মুখীন হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সির নতুন নবায়নের কাগজপত্র ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসে জমা দিতে না পারলে দূতাবাসের তালিকাভুক্তি বাতিল ও সার্ভার লক করে দেবে। ফলে এসব রিক্রুটিং এজেন্সি তালিকাভুক্তি বাতিল হলে তারা সউদীতে আর কর্মী পাঠাতে পারবে না। ফলে অফিসের জনবল এবং সউদীগামী কর্মীরা বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।

এদিকে, বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র জটিলতায় একমাত্র ভরসা সউদী আরবে জনশক্তি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জোর দাবি, সরকার যেন আগের মতো ১-২৪ পর্যন্ত সত্যায়নবিহীন বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান সাপেক্ষে সউদী আরবে জনশক্তি প্রেরণের জটিলতা নিরসন করা হয়। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে ১০টি শর্ত প্রত্যাহার করে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিতে হবে। এদিকে, গত ৪ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই-কমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) এ এস এম জাহিদুর রহমান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, মালয়েশিয়া কর্মরত কোনো কর্মীর কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ কিংবা নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর অভিযোগ হাইকমিশনের রেকর্ডে পাওয়া যায়নি। দেশটির নিয়োগকারী কোম্পানি কর্মীদের কোনো বেতন-ভাতা না দিলে বা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে হাইকশিনের মাধ্যমে তাদের সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান করা হয়।