Image description

অনভিজ্ঞদের পাইলট হিসেবে লাইসেন্স দেওয়া সংক্রান্ত ভয়াবহ একটি অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি চলতি বছরের ১৭ মার্চ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) অভিযান চালিয়ে ভয়াবহ সেই অনিয়ম খুঁজে পায়।

৩১ জুলাই অদক্ষ ব্যক্তিদেরকে পাইলটের লাইসেন্স প্রদান বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ।

দুদক সূত্র জানায়, একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেবিচকের ইস্যুকৃত অন্তত ১৪৪টি পাইলট লাইসেন্সের সঙ্গে জড়িত গুরুতর অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বেশ কয়েকটি ইস্যু করা হয়েছে গত দুই বছরে। অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- একজন পাইলট নিজের লাইসেন্সে নিজেই সই করে নিজেকে অনুমোদন দিয়েছে; আরেকজন এমন উড়োজাহাজের ‘চেক পাইলট’ হয়েছেন, যেটা তিনি কখনোই চালাননি; কয়েকজন পাইলট লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত পূরণের জন্য ভুয়া ফ্লাইট ঘণ্টা দেখিয়েছেন। 

দুদক গত মার্চে অভিযানে গিয়ে দেখতে পায়, পাইলটদের লিখিত পরীক্ষা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুমোদনহীন সফটওয়্যার ব্যবহার করে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার করা অফিশিয়াল ঠিকানায় কোনো অফিসও খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বেবিচকের অভিযানে ওই অনিয়ম ধরা পড়ার পর আইন ও বিধি মোতাবেক আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, পাইলটদের জন্য তিন ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল), কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) এবং এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স (এটিপিএল)। পিপিএল হলো প্রাথমিক ধাপ। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি উড়োজাহাজ ওড়ানোর অনুমতি পায়। আর পেশাদার পাইলট হতে হলে সিপিএল নিতে হয়। এটিপিএল পাইলটদের সর্বোচ্চ স্তরের সনদ। বিস্তৃত ফ্লাইট অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর বাণিজ্যিক এয়ারলাইনসের প্রধান পাইলট হওয়ার জন্য এই সনদ প্রয়োজন হয়। দুদক সূত্র জানায়, অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়া ১৪৪ জনের মধ্যে ১২০ জনের পিপিএল, ২২ জনের সিপিএল এবং দুজন এটিপিএল পেয়েছেন।

২০১৭ সাল থেকে এ৪ এরো লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাইলট হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা পরিচালনা করে আসছে। পরীক্ষাগুলো একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নেওয়া হয়, যা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেবিচক পরীক্ষার ফলাফল পায়।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, সফটওয়্যারটির পূর্ণ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ এ৪ এরোর কাছেই রয়েছে। এমনকি পরীক্ষার সব তথ্যও সংরক্ষিত আছে তাদের ক্লাউড সার্ভারে। এর ফলে জালিয়াতি ও প্রতারণার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ৪ এরোকে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধিমালা মানা হয়নি। অভিযানে ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদের জাল সনদ ব্যবহার করে পাইলট প্রাপ্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্ত শেষে তার লাইসেন্স বাতিলও করা হয় এবং ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থানায় এ-সংক্রান্ত একটি মামলাও হয়।

দুদক নথিপত্র ঘেঁটে দেখে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে পরীক্ষার দায়িত্ব নেওয়া শুরু করে। যদিও তখন পর্যন্ত তারা নিবন্ধিতই ছিল না। ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৪টি পরীক্ষা নিয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির মালিক এস এম নাজমুল আনাম। তিনি বেবিচকের সাবেক ফ্লাইট সেফটি ডিরেক্টর। নাজমুল বর্তমানে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ফ্লাইট সেফটি রিজিয়নাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ৪ এরোর মালিকানায় বেবিচকের আরেক পরিচালক চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীরেরও নাম পাওয়া যায়।

সূত্র জানায়, চৌধুরী জিয়াউল নিজেই নিজের এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্সে সই করেছেন। সেটি ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা হয় এবং সেখানে তার নিজস্ব সিল ও সই রয়েছে। জিয়া যখন নিজের লাইসেন্সে সই করেন, তখন তিনি পাইলটদের লাইসেন্স যাচাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফ্লাইট সেফটি রেগুলেটর ছিলেন। এটা বড় অনিয়ম।