Image description
বিএনপি জামায়াত এনসিপি বামদলের আলাদা তৎপরতা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন নতুন জোট হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট দীর্ঘদিন সমমনাদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। একসময় জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির জোটসঙ্গী ও সমমনা রাজনৈতিক দল ছিল। এখন জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নির্বাচনি জোট গঠনের প্রক্রিয়া হচ্ছে। নতুন জন্ম নেওয়া বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রথম সারিতে রয়েছে। দল গঠনের পর থেকেই জল্পনাকল্পনা ছিল এনসিপি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কোন দিকে যাবে। শেষ পর্যন্ত আমার বাংলাদেশ পার্টি, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে জোট গঠন হচ্ছে। এদিকে বাম রাজনৈতিক দলগুলো বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, বামদলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চায়। নির্বাচন সামনে রেখে এভাবেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জোটের নতুন হিসাবনিকাশ। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচার ও সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পর প্রার্থী চূড়ান্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মূল ব্যস্ততা নির্বাচনি জোট নিয়ে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকে জোটে পেলে বিজয় নিশ্চিত হবে সেই অঙ্ক কষছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোটের সমীকরণ চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে থাকা দলগুলো নিয়ে বৃহৎ জোট গঠন করতে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপি ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও সমমনা দলগুলোর জন্য বেশ কিছু আসন রেখে দেওয়া হয়েছে। সমমনাদের কাকে কোন আসনে প্রার্থী করা যায়, এ নিয়ে বিএনপি এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ১২-দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও গণফোরাম।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি বৃহৎ জোট গঠনের চিন্তা করছে। যাদের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করেছি এবং একটা বৃহৎ জোটের জন্য আমরা চিন্তা করছি। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যাতে আমরা ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে এই নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে পারি।’

এদিকে একসময় বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত এবং পরবর্তী সময়ে সমমনা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী শাসনামলে রাজপথে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু দলের পক্ষে একক প্রার্থী দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে আটটি রাজনৈতিক দল নিয়ে বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সরব রয়েছে। দলগুলোর এ প্রক্রিয়াকে জামায়াত জোট না বলে নির্বাচনি সমঝোতা বলছে। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি। নির্বাচন ঘিরে এই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতে আরও বেশ কিছু দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই সমঝোতায় সব দলের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবেন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত শনিবার চট্টগ্রামে দলীয় এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করবে না, বরং নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতায় যাবে।

এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কোন জোটে যাচ্ছে, তা নিয়েই চলছে নানা সমীকরণ। এনসিপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে না তারা। বিএনপি ও জামায়াত দুটি দলকেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বলছেন, বৃহত্তর স্বার্থে সংস্কারের পক্ষে এবং উদার গণতান্ত্রিক ধারায় যেসব দল বিশ্বাসী তাদেরকেই বেছে নেবে এনসিপি।

এনসিপির জোট প্রসঙ্গে গতকাল ফেনীতে আয়োজিত এক সভায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন জোট গঠন করা হবে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে দল হিসেবে যারা সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছে, তাদের নিয়ে এই জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটে এবি পার্টির সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল থাকবে। জোট ঘোষণার সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ নভেম্বর।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও মিডিয়া সদস্যসচিব খান মুহাম্মদ মোরসালিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কোনো জোট করছি না। আদর্শগতভাবে মিল থাকলে যুগপৎ যাত্রা হতে পারে।’

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে দীর্ঘদিন শরিক থাকা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এবারের নির্বাচনে দল ও মার্কার পাশাপাশি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে যোগ্য প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। মুক্তিকামী গণতন্ত্রকে সামনে রেখে আমাদের লড়াই এগিয়ে নিতে চাই। সেই লড়াইটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত যে রাজনৈতিক অবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা সামনে আনবেন তাদের সঙ্গেই আমাদের ঐক্যর প্রশ্নটি আসবে।’

বামপন্থিদের বৃহত্তর জোট আত্মপ্রকাশ হতে পারে চলতি মাসেই। যুক্তফ্রন্টের আদলে বাম ঘরানার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে নতুন একটি জোট গঠন হবে। ২৯ নভেম্বর এই জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। ‘একসঙ্গে আন্দোলন এবং নির্বাচন’- এমন লক্ষ্য নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই জোট ৩০০ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উ™ূ¢ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বামপন্থিদের এই জোট গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ছয়টি বামদল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ বৃহত্তর এ জোট গঠনের মূল উদ্যোক্তা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)।