Image description
বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ।

ভূমিকম্পের সময় দোকান থেকে দ্রুত বের হতে গিয়ে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সোবাহান মিয়া। বর্তমানে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন। সোবাহান মিয়া বলেন, ‘ভূমিকম্প শুরু হলে সবাই জীবন বাঁচাতে দৌড় দেয়। এ সময় ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে পায়ে প্রচ- ব্যথা পাই। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক বলেন পা      ভেঙে গেছে। সারাক্ষণ মনে হচ্ছে আবার বুঝি কেউ ধাক্কা দিল। এবার তো ভাঙা পা নিয়ে দৌড়ে জীবন বাঁচাতেও পারব না।’

শুধু সোবাহান মিয়াই নন, ভূমিকম্পের আতঙ্কে দিন কাটছে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ সারা দেশের মানুষের। শুক্রবারের রেশ ধরে শনিবারও দুই-তিন দফার ভূমিকম্পে ভয় ছড়িয়েছে জনমনে। অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ শহরের প্রতিদিনের চিত্র হলেও এবার তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভূমিকম্প। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ এবং নগরবিদরা বলছেন, এই ভূমিকম্প ছিল কেবল সতর্কতার পূর্ববার্তা। এখনই পরিপূর্ণ সতর্কতা না মানলে মৃত্যুকূপে পরিণত হবে ঢাকা। জনগণের পাশাপাশি ভূমিকম্প নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারও। গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ‘বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকালিায় কী পরিস্থিতি হবে তা বলা যায় না। এতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে ভূমিকম্পের আগে বার্তা দেওয়ার কোনো অ্যাপস নেই। অন্য দেশে ১০ সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা দেয় এমন অ্যাপ আছে বলে জানা গেছে। আমরা বিষয়টি পরীক্ষা করছি। আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হবে।’ গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির নিয়মিত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নগর এলাকায় উন্মুক্ত জায়গার ঘাটতি আছে। জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভূমিকম্প-ঝুঁকি কমাতে এসব বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি। সবাইকে বিল্ডিং কোড মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আবাসিক হলগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষানিরীক্ষা করে ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে দুই সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। রবিবার বিকাল ৫টার মধ্যেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রভোস্ট কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে বের হবে এবং কক্ষের চাবি হল প্রশাসনের কাছে জমা দিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের ডাইনিং ও ক্যানটিন বন্ধ থাকবে।

গতকাল দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। তবে হঠাৎ করে হল ত্যাগের নির্দেশে নারাজ অনেক শিক্ষার্থী। তাঁদের কেউ কেউ আবার হল ছাড়তেও অসম্মতি জানিয়েছেন।

নিজের যে কোনো ধরনের ক্ষতির দায় নিয়ে হলে অবস্থান করার অনুমতি চেয়ে প্রভোস্ট বরাবর আবেদন করেছেন মুহসীন হলের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের সাইদুর রহমান শাহিদ নামের এক শিক্ষার্থী। ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে প্রকৌশল দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসহ বিভিন্ন হলের পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে প্রকৌশল দল হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এবং বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন করে।

আজ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ সময় বন্ধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা।

৪৮ ঘণ্টা গ্যাসকূপ খনন ও জরিপ বন্ধ : ভূমিকম্পের জন্য সতর্কতার অংশ হিসেবে দেশের সব এলাকার গ্যাসকূপ খনন ও জরিপ কার্যক্রম (ড্রিলিং) ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তবে এ সময়ে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ফাওজুল কবির খান বলেন, যেহেতু পরপর কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে তাই গ্যাসকূপ খনন কার্যক্রম ভূমিকম্পকে যেন আর প্রভাবিত না করে এ কথা বিবেচনায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার অধীন কোম্পানিগুলোর জরিপসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত।

পেট্রোবাংলার উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তারিকুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার নির্দেশক্রমে আজ (রবিবার) থেকে ২৫ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি আবার ভূমিকম্প হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ রাখার ব্যাপারে জানানো হবে।