দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় সড়ক সংস্কারের জন্য সরকারি বরাদ্দ ২৭৭ কোটি টাকার মধ্যে ২০৬ কোটিই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়। এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের দুই ভাই মিরাজুল ইসলাম ও মো. সামসুদ্দিন। ভুয়া বিলের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২০ মে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তার দেড় মাসের ব্যবধানে শুরু হয় ৪৩ দিনের দীর্ঘ বন্যা। একাধিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের বিভিন্ন জেলার স্থানীয় সড়ক। তারপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ‘ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্প হাতে নেয় ৫৫ জেলার জন্য।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখেছেন, বরাদ্দকৃত ২৭৭ কোটি টাকার মধ্যে ২০৬ কোটি টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে এখনো অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়নি। তাঁরা এখন পলাতক রয়েছেন। জানা গেছে, এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল মহারাজের দুই ভাই ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এবং হিসাবরক্ষণ অফিসের ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। এর মধ্যে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মহারাজের দুই ভাইয়ের একজন মিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যজন মো. সামসুদ্দিন উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় এই প্রকল্পের ৬৪টি স্কিমের মধ্যে মিরাজুল ইসলাম ৬১টি নিজের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল (প্রা.) লিমিটেড ও সাউথ বাংলা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ভাই মো. সামসুদ্দিন তিনটি স্কিম নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তেলিখালী কনস্ট্রাকশনের নামে পান।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর ৫৫টি উপজেলায় প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যেই শেষ করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। ভাণ্ডারিয়ায় দুর্নীতির ঘটনায় দেখা গেছে, সরকারি তদারকি ছিল খুবই শিথিল। নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং হিসাবরক্ষক এ কে এম মোজাম্মেল হক খান মিলিতভাবে ভুয়া বিল তৈরি করেন। প্রকল্পের কার্যাদেশ, পরিমাপ বই, ডিজাইন ও অনুমোদিত কাগজপত্র উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে সরবরাহ করা হয়নি। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিল পরিশোধ করেন। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, কার্যাদেশের প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়াই বিল পাস করে এলজিইডি। শুধু তা-ই নয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই ভুয়া বিলের অনুকূলে চেকের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দেওয়া হয়। জানা গেছে, ভাণ্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এই বিল পাসের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন।
দুদক পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো, আমিনুল ইসলাম মামলা তদন্ত করছেন। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তকাজ শেষ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।