অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দেড় বছরেও পদোন্নতি পাননি শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চিত সদস্যরা। এতে তাঁদের মধ্যে ঘোর অসন্তোষ বিরাজ করছে। সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাঁরা পদোন্নতিবঞ্চিত হন। প্রভাষক পদে পাঁচ বছর চাকরির পর সহকারী অধ্যাপক পদে তাঁদের পদোন্নতি পাওয়ার কথা, কিন্তু বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম বিসিএসের অনেক কর্মকর্তা এক যুগ পরও পদোন্নতি পাননি।
সূত্র জানায়. ৩২তম ও ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের চার শতাধিক প্রভাষক চাকরিতে যোগদানের এক যুগ পরও প্রথম পদোন্নতি পাননি। এ ছাড়া ৩৪তম বিসিএস ১০ বছর, ৩৫তম বিসিএস ৯ বছর, ৩৬তম বিসিএস আট বছর, ৩৭তম বিসিএস সাত বছর পার করলেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা।
এদিকে পদোন্নতির দাবিতে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষকরা। তাঁরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
প্রভাষকরা জানান, অন্য ক্যাডারের ৩৬তম ব্যাচ ২০২৩ সালে এবং ৩৭তম ব্যাচ ২০২৪ সালে পদোন্নতি পেয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদোন্নতির জন্য চলতি বছরের ৪ জুন প্রথম দফায় ডিপিসির (ডিপার্টমেন্টাল প্রোমোশন কমিটি) বৈঠক হয়। কিন্তু সেই বৈঠকের পাঁচ মাস পরও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এরপর শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৬ নভেম্বর এবং পরে একাধিক ডিপিসি সভা করে।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রভাষকরা দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত। আমরা তাঁদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাঁদের পদোন্নতির বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে অনুরোধ করেছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির লক্ষ্যে গ্রেডেশনভুক্ত কর্মকর্তার ৩২তম বিসিএসে রয়েছেন ৫৪ জন, ৩৩তম বিসিএসে ৩৬১ জন, ৩৪তম বিসিএসে ৬৩১ জন, ৩৫তম বিসিএসে ৭৪০ জন, ৩৬ বিসিএসে ৪৬০ জন এবং ৩৭তম বিসিএসে ১৫৩ জন। তবে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের ডিপিসির সভায় আপাতত ৩৫তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়ার ব্যাপারে কমিটির সদস্যরা একমত হন।
ভুক্তভোগী ক্যাডার কর্মকর্তারা দাবি করেন, শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত যোগ্যদের অনতিবিলম্বে পদোন্নতি দিতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলেই পদোন্নতি দিতে পারে। কেননা যোগ্যদের তালিকায় থাকা ৩৫তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ থাকছে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০-এর ৬(৫) ধারা অনুযায়ী, আত্তীকৃত শিক্ষকরা সব যোগ্যতা অর্জনের পর নিয়মিত হলে তখন থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠতা গণনা শুরু হবে। কিন্তু বিধিমালা পাশ কাটিয়ে একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে গত কয়েক বছর মন্ত্রণালয় ৫৪টি বিকল্প আদেশ জারি করে, যেখানে কলেজ সরকারীকরণের দিন থেকে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা গণনার কথা বলা হয়। এই আদেশের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার আত্তীকৃত শিক্ষক অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন। আর শিক্ষা ক্যাডারের অনেক সদস্যই আগে নিয়মিত হয়েও আত্তীকৃত শিক্ষকদের জুনিয়র হয়ে যাবেন।
জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর মন্ত্রণালয় ওই বিকল্প আদেশ আমলে না নিয়ে বিধিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা করেন। এতে আত্তীকৃতরা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আর এই মামলার অন্য পক্ষ হন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বিকল্প আদেশকে আমলে নিয়ে কলেজ সরকারীকরণের দিন থেকে আত্তীকৃত শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা গণনার আদেশ দেন। যদিও বিসিএস শিক্ষক ও সরকার উভয়েই এ ব্যাপারে আপিল করে। অন্যদিকে বিকল্প ৫৪টি আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টেও মামলা করেছেন শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা।
মাউশি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (আইন) মো. জাকিরুল ইসলাম মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আত্তীকৃত শিক্ষকদের কলেজ সরকারীকরণের দিন থেকে জ্যেষ্ঠতা গণনা করার রায়ের ব্যাপারে মঙ্গলবার আপিল শুনানি হয়। আপিল বিভাগের রায়ের সার্টিফায়েড কপিটি পেলে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব। যত দূর জেনেছি, রায়টি সরকারের পক্ষেই আছে। শিগগিরই হয়তো মন্ত্রণালয় পদোন্নতির কাজ শুরু করতে পারবে।’