Image description
তিন পয়েন্ট দিয়ে পাচার, নেপথ্যে ৯ জনের সিন্ডিকেট

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নতুন ফাঁদ পেতে মাঠে নেমেছে মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। চক্রটি রোহিঙ্গা নারীদের বিলাসী জীবনের লোভ দেখিয়ে পাচার করছে মালয়েশিয়ায়। কক্সবাজারের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে সাগরপথে তাদের পাঠানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা নারী পাচারের নেপথ্যে রয়েছে ৯ জনের বিশেষ সিন্ডিকেট।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানব পাচার রোধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে পাচার চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের হোতাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

মানব পাচার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে আসছে। এক মাসে ১৩টি অভিযানে ৩৪৭ জন ভুক্তভোগী উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বড় একটা সংখ্যা ছিল রোহিঙ্গা নারী। পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৭ জনকে আটক করা হয়। গত বছর সমুদ্রপথে মানব পাচারকালে ১৫০ এর বেশি ঘটনায় ৬৫৭ জন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হয়েছেন। এসব ঘটনায় পাঁচ শ মানব পাচার মামলা কক্সবাজারের তিনটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে তিনটি মানব পাচারকারী চক্র। চক্রের নেপথ্যে রয়েছেন ৯ সদস্য। তারা তিনটি পয়েন্ট দিয়েই রোহিঙ্গাদের থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার করছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাদের মূল টার্গেট ছিল রোহিঙ্গা পুরুষ। কিন্তু বর্তমানে পুরুষের চেয়ে নারী রোহিঙ্গা পাচার হচ্ছে বেশি। মানব পাচারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট টেকনাফের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের লাগোয়া বাহারছড়া ইউনিয়ন। এ পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করেন হোসাইন, আবদুল গফুর এবং নিজাম। নাফ নদের সঙ্গে লাগোয়া হোয়াইক্যং সীমান্তের নয়াপাড়া, উনচিপ্রাং এবং কানজরপাড়া পাচারের অন্যতম রুট। এ এলাকায় রফিকুল ইসলাম (রফিক), সাইফুল এবং আবদুল করিম পাচারের নেপথ্যে রয়েছেন। শাহপরীর দ্বীপ মানব পাচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে। এ এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই নৌকা ছাড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। শরীফ হোসেন ও তার দুই সহযোগী পয়েন্টটি নিয়ন্ত্রণ করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস এবং কাজের সুযোগ না থাকায় অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১ লাখ রোহিঙ্গা পুরুষ সাগরপথে পাড়ি দিয়েছেন মালয়েশিয়া। পাচারকারীরা সাধারণত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলীয় এলাকা থেকে নৌকায় করে রোহিঙ্গাদের পাঠায়।

সদ্য প্রকাশিত ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট-২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে কিন্তু ন্যূনতম মান পূরণে এখনো ব্যর্থ।’ ইউএনএইচসিআর পৃথক বিবৃতিতে সতর্ক করে উল্লেখ করেছে- রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাচার বর্তমানে একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক ঝুঁকি। উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া গমন বা ক্যাম্প ত্যাগের প্রবণতা বাড়ছে।