ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গভীর রাতে পুলিশি অভিযানের পর সকালে এক আসামির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আবু সাদাদ সায়েমের (৫০) মরদেহ ধানক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরিবারের অভিযোগ, রাতের অভিযানের সময় পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। তবে পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিহতের পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গভীর রাতে এসআই মানিক মিয়ার নেতৃত্বে হালুয়াঘাট থানা পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সায়েমকে ধরতে তার বাড়িতে যায়। এ সময় সায়েম ঘর থেকে বের না হলে পুলিশ গ্রিলের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করলে সায়েম পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ চলে যায়। পরের দিন শুক্রবার ভোরে সায়েমের বৃদ্ধ পিতা মোসলেম উদ্দিন বিল্লাল ছেলেকে খুঁজতে বের হয়ে বাড়ির পেছনের ধানক্ষেতে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে আত্মীয়দের সহায়তায় বাড়িতে এনে সায়েমের হাত-পায়ে মালিশ করলেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাকে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মোসলেম উদ্দিন বিল্লাল জানান, পারিবারিক জমি নিয়ে তার ভাই মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি তার ছেলে সায়েম জমির কাগজপত্র দেখে নিজের অংশ দাবি করায় দুই ভাইয়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ওই বিরোধের জেরেই সম্প্রতি ভাইদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং তারা থানায় মামলা করে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় আমরা জামিনে এসেছিলাম, আগামী রবিবার বড় ছেলে সায়েম ও ছোট ছেলে জসিমের জামিন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাতেই পুলিশ বাড়িতে আসে। জোরপূর্বক গ্রিল ভেঙে ঢোকার পর আমার ছেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে সকালে তার মরদেহ ধানক্ষেতে পাওয়া যায়।’
নিহতের ভাই জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘এসআই মানিকের সহযোগিতায় বাদীপক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। এমনকি মামলায় গ্রেপ্তার না করার শর্তে এসআই মানিক আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কীভাবে গভীর রাতে গ্রিলের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করতে পারে? তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।’
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া হালুয়াঘাট থানার এসআই মানিক মিয়া আসামি ধরতে যাওয়া স্বীকার করলেও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করছি। নিহত ব্যক্তিকে অন্য কোথাও হত্যার পর ফেলে রাখা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া পুলিশের কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম থাকলে তাও তদন্তের মাধ্যমে বের করা হবে।’