Image description

দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি আর্থিকখাত। বিশেষ করে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার। জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতে নানামুখী সংস্কার ও পদক্ষেপের মাধ্যমে স্থি’তিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও আর্থিকখাতের আরেক চালিকাশক্তি পুঁজিবাজারে বিপরীত অবস্থা বিরাজমান। ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাজার ডুবতে বসেছে। স্পর্শকাতর এই খাতটির সঙ্গে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের সরাসরি বিনিয়োগ জড়িত, প্রতিদিনের লেনেদেনের প্রতিফলন ঘটে সূচক উঠা-নামার মাধ্যমে, ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়াটিও সূচকের সমান্তরাল রেখায় প্রতিফলিত হয়। সূচক ও লেনদেন তলানিতে নামছে, যেন দেখার কেউ নেই। অবশ্য এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের খামখেয়ালীপনা, বাজার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব, নানা হঠকারী সিদ্বান্ত, ব্যক্তিগত অভিপ্রয়াস, পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে অবমূল্যায়ন, কমিশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানাবিধ কারণে দেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে ধ্বংসের দারপ্রান্তে।

বিশেষ করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে আগের সময়ের ছোট ছোট ভুল ত্রুটিকে সামনে এনে বড় অঙ্কের জরিমানা ও অন্যান্য শাস্তির মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়- ছোট একটি ভুলের কারণে যেখানে ১০ লাখ টাকা জরিমানা শ্রেয়, সেখানে ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে বিপাকে ফেলতে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। এই জরিমানার টাকা আসলে কোনভাবেই উসুল করা সম্ভব নয়; কারণ ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হয়তো ওই জরিমানার অর্থ প্রদানের সক্ষমতাই নেই। অথবা তিনি মামলা করে সিদ্ধান্ত আটকে দিবেন। অপরদিকে, এ ধরণের হঠকারী সিদ্ধান্তে বাজার ও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আস্থাহীনতায় ইতোমধ্যে বাজার ছেড়েছেন হাজারো বিনিয়োগকারী। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্যমতে, ঠিক পাঁচ মাস আগে অর্থাৎ, গত মে মাসে পুঁজিবাজারে মোট বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫১১টি, যা সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর বুধবার ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫টিতে নেমে আসে। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসে পুঁজিবাজারে ৪৭ হাজার ৪৭৬টি হিসাব বন্ধ হয়েছে। শুধু হিসাবধারীই নয়; বাজার মূলধনও প্রতিদিন কমছে। চলতি মাসের ১২ থেকে ১৬ অক্টোবরেই বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। গত এক বছরে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত পুঁজি কমেছে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। আগে একসময়ে বাজার মূলধন কমলেই দোষারোপ করা হতো সালমান এফ রহমানসহ একাধিক ব্যক্তির নামে। আর সালমান এফ রহমান বর্তমানে জেলে আছেন। তাহলে বর্তমান বাজার মূলধনের হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছে?

শুধু তাই নয় খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের সময়ে একটি নতুন আইপিও অনুমোদন পায়নি। যা নতুন মূলধন প্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর আরেকটি বড় প্রমাণ হলো- খুচরা বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক প্রস্থান। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৬৪ হাজার বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিও বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডিএসইএক্স সূচক ২০২৪ সালের ১৮ আগস্টে ছিল পাঁচ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৬৪, যা ২০২৫ সালের ৩ জুনে নেমে আসে চার হাজার ৬৬৪ দশমিক ৭৯-এ। অর্থাৎ এক হাজার ১১৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ কমেছে। যা বর্তমানে পাঁচ হাজারে ১২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে হাসিনার পতনের পর সরকার টাস্কফোর্স গঠন করে। শেয়ারবাজারে আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে ১৭টি বিষয়ে সংস্কার সুপারিশ করা হয়। এই টাস্কফোর্সের পেছনেও সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ ঢালতে হয়েছে। অথচ টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নের নাম নেই। এছাড়া চলতি বছরের মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কয়েকটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে (এমএনসি) থাকা সরকারি শেয়ার অফলোড ও দেশীয় বড় বড় কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি করা এবং বড় বড় কোম্পানি যাতে ব্যাংকঋণ নেওয়ার বদলে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এই নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু কোনকিছু বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। একই সঙ্গে ১৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে (এসওই) বাজারে নিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাও স্থবির হয়ে পড়েছে। আর তাই বাজারে উল্টো চিত্র বিরাজমান। প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে হতাশ বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালা ২০২৫ (ড্রাফট) প্রণয়ন করা হয়েছে। যা আগামী দিনে পুঁজিবাজারকে আরো খাদের কিনারে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতিমালা পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌঁছাবে।

শেয়ার বাজারে অস্থিরতার জন্য বিএসইসি’র প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের দাবি, কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী ফোর্সড সেলের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এতে তাদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হতাশাও। বাজারের টানা দরপতনের প্রতিবাদে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবি করেছেন শেয়ার বাজারের বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পুঁজিবাজার বন্দী হয়েছে এক নব্য স্বৈরাচারের আয়নাঘরে।’ বাজার ফেরাতে রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়্যারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারি ও ভালো ব্যবসা করছে এমন দেশীয় কিছু কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, পাবলিক ইস্যু রুলসে যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সংশোধন আনার প্রক্রিয়া চলছে। ভালো কোম্পানিকে দ্রুত ও স্বল্পসময়ে তালিকাভুক্ত করতে ‘গ্রিন চ্যানেল’ তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান ডিএসই’র চেয়্যারমান।

পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ ও গতিশীল করতে নতুন নতুন আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন খুবই জরুরি বলে মনে করেন বিএসইসি’র সাবেক চেয়্যারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, মূলধন উত্তোলন না হলে ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার ড্রাই হয়ে পড়বে। নতুন শেয়ারের যোগান না বাড়ায় পুঁজিবাজার আগাচ্ছে না। আগে যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

সূত্র মতে, গত বছরের ১৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানাভাবে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বর্তমান রাশেদ মাকসুদ কমিশন। অথচ সবাই মনে করেছিল- নতুন, সংস্কারমুখী নেতৃত্ব বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করবে, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় আধুনিকায়ন আনবে এবং ডুবন্ত পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। কিন্তু ঘটছে উল্টো। এমনকি সম্প্রতি প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালা ২০২৫ (ড্রাফট) প্রণয়ন করা হয়েছে। সবাই আশা করেছিল এই নীতিমালায় ভালো কিছু থাকবে। কিন্তু যা রাখা হয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারকে টেকসই উন্নয়নের পরিবর্তে ধ্বংস করবে বলে মত বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের। কি আছে নীতিমালায়-

এসএমই বোর্ডে বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা

প্রস্তাবত নীতিমালায় বিশেষ করে এসএমই বোর্ডে বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- প্রস্তাবিত ড্রাফটে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা উহার কোনো স্কীমের অধীন সংগৃহীত অর্থ কেবলমাত্র স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ এ বিনিয়োগ করতে হবে। অথচ উন্নত বিশ্বসহ প্রতিবেশী দেশেও অনেক ভালো ভালো কোম্পানি এসএমই বোর্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বিশ^ব্যাপী নামকরা ও বড় প্রতিষ্ঠানেই রূপান্তরিত হয়েছে। এসএমই বোর্ডে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল কোম্পানি বিনিয়োগে আসতে পারবে না। যার নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে সাধারণ বিনিয়োগকারীর উপরও পড়বে।

নতুন করে মেয়াদি ফান্ডের নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্বান্ত

পুঁজিবাজারের উন্নয়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। মেয়াদি ফান্ড দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে উৎসাহিত করে, পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে। গত ৫ অক্টোবর পর্যন্ত, পুঁজিবাজারে ৩৬টি ক্লোজ-এন্ড ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে, যার মোট সম্পদ প্রায় চার হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালা অনুযায়ী একদিকে নতুন কোন মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারে আসবে না এবং বর্তমানে যে সব মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারে রয়েছে, সেগুলো অবসায়ন হওয়ার আশংকা রয়েছে, যা পুঁজিবাজারের জন্য কোনভাবেই ইতিবাচক নয়। অথচ পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ আরো বৈচিত্রময় মেয়াদি ফান্ড যেমন- ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, ব্যালেন্স ফান্ড এবং সেক্টর-নির্দিষ্ট ফান্ডÑ যা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করবে।

হেফাজতকারীর অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রদানে ব্যয় বৃদ্ধি ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে জটিলতার সৃষ্টি

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী সম্পদ ব্যবস্থাপকের ফান্ড সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম ট্রাস্টি ও হেফাজতকারীর (কাস্টোডিয়ান) সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নজরদারির মধ্যে থাকে। প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালা ২০২৫ (ড্রাফট)-এ হেফাজতকারীকে (কাস্টোডিয়ান) ফান্ডের সকল সিকিউরিটিজ হিসাব, ব্যাংক হিসাব ও ফান্ড বা উহার স্কীমের ইউনিট ইস্যু বা সমর্পন হিসাব পরিচালনার দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়। ট্রাস্টি ও কাস্টোডিয়ানের প্রত্যেকের ফি পূর্বের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। যার ফলে ফান্ডের ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং ফান্ডের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হবে। যার নেতিবাচক প্রভাব প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে বিনোয়গকারীদের উপর পড়বে।

মূলধন বৃদ্ধির সময়সীমা

প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালায় সম্পদ ব্যবস্থাপক সমূহের পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করার জন্য এক বছরের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, যা পূর্বের নীতিমালায় পাঁচ কোটি টাকা ছিল। একবছর সময়সীমার মধ্যে মূলধন পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা অনেকাংশেই অবাস্তব সিদ্ধান্ত। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই এটা সম্ভব হবে না। তাই কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

স্কীমের জন্য সংগৃহিতব্য নূন্যতম অর্থ

প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালা-২০২৫ (ড্রাফট)-এ নতুন বে-মেয়াদি স্কীমের জন্য সংগৃহীতব্য নূন্যতম অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা পূর্বের নীতিমালায় ১০ কোটি টাকা ছিল। বর্তমান পুঁজিবাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যেখানে ২৫ কোটি টাকার বে-মেয়াদি ফান্ড সংগ্রহ করা দুষ্কর হয়ে পড়ে, সেখানে বে-মেয়াদি স্কীমের জন্য সংগৃহীতব্য নূন্যতম অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণের অবাস্তব পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে করে নতুন বে-মেয়াদি ফান্ড বাজারের নিয়ে আসার রাস্তা অনেকাংশেই সংকুচিত হয়ে পড়বে। ফলে নতুন বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করার পথও সংকুচিত হবে, যার প্রভাব পুঁজিবাজারের উপরে পড়বে।

অর্থ বাজার বা মানি মার্কেটে বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা 

প্রস্তাবিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালায় চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব ও স্থায়ী আমানত সবমিলিয়ে ফান্ড সাইজের ১৫ শতাংশের বেশি অর্থ বাজার বা মানি মাকের্টে বিনিয়োগ করা যাবেনা। এই বাধ্যবাধকতার ফলে ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা ফি পূর্বের নীতিমালা থেকে কমানো হয়েছে। অথচ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা যত বেশি বৃদ্ধি পাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন তত বেশি টেকসই হবে। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত নীতিমালার ড্রাফটে শেয়ারহোল্ডার নন এমন কোন একজন ব্যক্তিকে পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদানের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। অথচ উন্নত দেশগুলোসহ বিশে^র অনেক দেশে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়। অপরদিকে, প্রস্তাবিত নীতিমালায় কোন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ইতোপূর্বে সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে এই বিধিমালা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করার বিষয়ে এবং পরিচালনা পরিষদের মোট সদস্যের এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকেও অযৌক্তিক বলেছেন।