মেট্রোরেল লাইনের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে প্রাণ হারানো আবুল কালামের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ এলাকা।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) ৩৬ বছর বয়সী আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া মর্গের সামনে কোলে ছোট ছেলেকে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজকে আমি ওকে বিদায় দিতে যাই নাই, দরজা লাগাতে চাই নাই। দেখি দরজার সামনে সুন্দর করে জুতা পরতেছে। ফ্রিজে দুধ রাখতে গিয়েছিলাম। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’
পাশে বসে পিয়ার মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা সত্যিই নাই? কীভাবে মারা গেলো? সিসি ক্যামেরা নাই? আমি দেখবো কীভাবে আমার কলিজার টুকরা মারা গেলো? আমার পিয়ারে আমি নিজ হাতে ওর কাছে তুলে দিয়েছিলাম। কেউ রাজি ছিল না। আমি বলছি, আমি রাজি, তোমার কাছে দিয়েছি, বাবা কইছে, আল্লাহ ভরসা, আপনি চিন্তা করেন না, আল্লাহই দেখবো। আমার বাবা কত শখ করে নিয়েছে আমার মারে। এমন আদর বাচ্চারে পৃথিবীতে কেউ করে না। আপনারা কী কন? আপনাদের কাছে অনুরোধ আমার বাবাকে আপনারা ঠিকঠাক মত বাসায় পৌঁছায় দেবেন।’
এসময় মর্গে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, সেতু বিভাগের সচিব আব্দুর রউফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদের সান্ত্বনা দেন।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘দেখেন, একজনের জীবনের দাম তো আমরা কোনও কিছু দিয়ে দিতে পারবে না। তবে আপনাদের যেন চলতে সমস্যা না হয়, বাচ্চারা যেন ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে; সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা আপনাদের পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিচ্ছি। আর পরবর্তী সময়ে আপনাদের পরিবারের কর্মক্ষম কেউ থাকলে তাকে চাকরি দেওয়া হবে। বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্যও সহায়তা করা হবে।’
এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনের নিচে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে ফুটপাতে হাঁটছিলেন কালাম। এমন সময় ওপর থেকে ভারী ইলাস্টোমোরিক বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
আবুল কালাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি এলাকার জলিল চোকদারের ছেলে। তিনি ট্রাভেল এজেন্সিতে এয়ার টিকিট বিক্রির কাজ করতেন এবং পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতেন। তার তিন ও চার বছর বয়সী দুই সন্তান রয়েছে।