Image description
জুলাই জাতীয় সনদ

রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে স্বাক্ষরের আগে আরেক দফা পরিবর্তন করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামায়। এর আগে দুই দফা পরিবর্তন করা হয়। প্রথম দফায় আট অঙ্গীকারের কথা থাকলেও দ্বিতীয় দফায় সাতটি চূড়ান্ত করা হয়।

১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হবে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর গ্রহণ অনুষ্ঠান। এর আগে আজ অথবা আগামীকাল সনদের চূড়ান্ত কপি পাঠানো হবে দলগুলোর কাছে। তার আগে বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ ও দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে অঙ্গীকারনামায় পরিবর্তন আনা হবে।

অঙ্গীকারনামার মূল বিষয় ঠিক রেখে কিছু পরিবর্তন করা হবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘বাক্য-শব্দেরও কিছু পরিবর্তন থাকবে।’ কী ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে-প্রশ্নে তিনি জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। কারণ সনদ স্বাক্ষরের আগে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে।’ কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দলের আপত্তি রয়েছে অঙ্গীকারনামায়। তারা বিষয়টি কমিশনকে জানিয়েছে। পরে বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে অঙ্গীকারনামায় কিছু বিষয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে যেসব দল অঙ্গীকারনামা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল তারা এখন সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে।

এর আগে সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এখন তাতে স্বাক্ষর করলে এ সনদ নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না দলগুলো। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতসহ (নোট অব ডিসেন্ট) ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে এ চূড়ান্ত খসড়ায়। এ ছাড়া সনদের চূড়ান্ত খসড়ার পটভূমি এবং অঙ্গীকারনামায় বেশ কিছু বিষয় যুক্ত ও পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনসহ পরবর্তী বিভিন্ন ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয় স্থান পেয়েছে, যা খসড়া কপিতে ছিল না।

চূড়ান্ত সনদে সংস্কারের প্রতিটি সিদ্ধান্তে কোন ধাপে কোন দলের কী অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। খসড়া সনদে আটটি অঙ্গীকার ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে চূড়ান্ত সনদে তা কমে সাতটি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৈরি অঙ্গীকারনামার শুরুতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণ অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। সনদের ব্যাখ্যা দেবেন একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট, এ অঙ্গীকার বাদ দেওয়া হয়েছে।

অঙ্গীকারের প্রথম দফায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জুলাই গণ অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের প্রাণে অর্জিত সুযোগ এবং জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্যের নতুন সমঝোতার দলিল হিসেবে সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে সরকারি দলগুলো।

দ্বিতীয় দফায়, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক; তাদের অভিপ্রায়ই হবে সর্বোচ্চ আইন। তাদের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। দলগুলো সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই সনদ ২০২৫ গ্রহণ করেছে। ফলে সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করা হবে। অঙ্গীকারের তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলবে না সই করা দলগুলো। বরং সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। পরের দফায় বলা হয়েছে, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে। পঞ্চম দফায় গণ অভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন এবং অভ্যুত্থানে হত্যার বিচারের অঙ্গীকার করা হয়েছে। পরের দফায় সনদ বাস্তবায়নে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। সপ্তম অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, সনদে গৃহীত সংস্কারের যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। এ কমিশনের রিপোর্টের আলোকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দফায় ৭২টি বৈঠকের পর ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে প্রায় চূড়ান্ত হওয়া জুলাই সনদ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে-এমনটিই প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলোর।