
একটা সময় ছিল সিলেটবাসী না চাইতেই অনেক কিছু পেতেন। তখন সিলেটের উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান, আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মতো সিলেটপ্রেমী রাজনীতিকরা। সিলেটের মানুষের কল্পনায় যেসব উন্নয়ন আসেনি সেসব উন্নয়নই তারা করে গেছেন। কিন্তু বিগত এক দশকে উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে পড়ে সিলেট। এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার সিলেটে তেমন কোনো উন্নয়ন কাজ করেনি।
শেষদিকে এসে ঢাকা-সিলেট রুটের ৬ লেনের কাজ শুরু করে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজও ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে হয়েছে দুর্নীতিও। আর রেলপথের উন্নয়ন নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই করা হয়নি। যার খেসারত এখন দিচ্ছেন সিলেট অঞ্চলের কোটি মানুষ। বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ সমস্যা এখন প্রকট। প্রতিটি সড়কই হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কেই সময় চলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের। এ কারণে এবার ভোটের মাঠে নেমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন সেটি হচ্ছে- ‘সিলেটের উন্নয়ন’। আগামীর সিলেট কেমন হবে- সেটি নিয়ে এন্তার আলোচনা গোটা অঞ্চল জুড়ে। জনগণের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন প্রার্থীরা। বঞ্চিত সিলেটকে নিয়ে এখন সরব মানুষ। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্ভোগে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মানুষ রাস্তায় নেমেই করছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। এদের মধ্যে কেউ আছেন ভোটের মাঠে আবার কেউ মানুষের জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সিলেটের উন্নয়ন বৈষম্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তার ডাকে রোববার সিলেটে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবসায়ী সহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন। আরিফুল হকও সরকারকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে এরই মধ্যে বার্নিং ইস্যুকে দমিয়ে রেখেছেন। আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- সিলেটবাসীর সঙ্গে বৈষম্য করার কারণে মানুষই এখন ক্ষুব্ধ। তিনি শুধু ডাক দিয়েছেন। আর এতে দলে দলে এসে মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে আসল কথা হচ্ছে আমরা সরকারকে ১৫ দিনের সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে যদি সিলেটের চলমান সমস্যাগুলোর সমাধান না করা হয় তাহলে দুর্বার আন্দোলনই শুধু গড়ে উঠবে না, সিলেটের মানুষ কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। এদিকে সিলেটের মানুষের এই ক্ষোভের মুখে পৃথক ভাবে আন্দোলনে নেমেছেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীও।
গতকাল তার ডাকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে নেমে এসেছিলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্ভোগ কমাতে তিনিও সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন- যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সিলেটবাসী আর বঞ্চনা সহ্য করবে না। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দ্রুত সংস্কার ও গুণগত মান নিশ্চিত করা, অতীত প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, দুর্ঘটনা রোধে বিকল্প ট্রাফিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্ঘটনায় নিহত-আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এটি কোনো দলীয় আন্দোলন নয়। এই দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতারাও আন্দোলনে নেমেছেন। দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সিলেট অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ নেতা এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলে এসেছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্ভোগ লাঘব সহ একাধিক সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে তারা ওই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। স্থানীয় ভাবে জামায়াত নেতারা দাবি আদায়ে সক্রিয় রয়েছেন। সিলেটের ৪ শিক্ষার্থী একই দাবিতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৬ ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসক গিয়ে তাদের অনশন ভাঙান। এদিকে- সিলেট-৫ ও সিলেট-৪ আসনের অভ্যন্তরীণ ভাঙাচুরা সড়ক সংস্কার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন ভোটের মাঠে থাকা স্থানীয় নেতারা। সিলেট-৫ আসনের গুরুত্বপূর্ণ বুরহানউদ্দিন সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত করতে বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন ঢাকার মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তদবির করছেন। বাঘা এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দেখে সিলেট-৬ আসনের জামায়াত প্রার্থী সেলিম উদ্দিনও এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ মহলে দাবি উত্থাপন করেছেন। গতকাল সিলেটে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেট-৫ আসনের সড়ক যোগাযোগের বেহাল অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোটের মাঠে থাকা প্রার্থী জাকির হোসাইন। এদিকে- সিলেটের মানুষের এ যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম নিজেও জানিয়েছেন- ৫-৭ বছরে উন্নয়ন কাজ না হওয়ার কারণে সিলেটের এই সংকট প্রকট হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। এখন জনগণের দাবি তিনি জোরালো ভাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তুলে ধরছেন। সিলেট-ঢাকা রেলপথে নতুন একটি ট্রেন সংযুক্ত করার ব্যাপারে তিনি কাজ করছেন বলে জানান। আর আকাশপথে ভাড়া কমাতে তিনি সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।