Image description
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনে চলছে মামলা

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে এনবিআরের মূসক বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার এনবিআরের বর্তমান প্রশাসন বেলাল হোসেন চৌধুরীকে কাস্টম, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল, ঢাকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদায়ন করেছে। এই আপিল ট্রাইব্যুনাল মূলত এনবিআরের বিচারিক কার্যালয়। দুদকের মামলার আসামিকে বিচারক হিসেবে পদস্থ করায় শুরু হয়েছে সমালোচনা।

এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলাল হোসেন চৌধুরী জিও ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং সেখানে ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করেন। যদিও দুদকের অনুসন্ধান চলমান থাকায় তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও ছিল। এ কর্মকর্তার দাবি, তিনি আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ নিয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। আর জিও ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে এনবিআরের শোকজের জবাবে তিনি দাবি করেছেন, ট্রানজিট হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গিয়েছিলেন। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, জিও ছাড়া সরকারি কর্মচারীর বিদেশযাত্রা চাকরিবিধির লঙ্ঘন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের মামলার আসামিকে আরেকটি দপ্তরের বিচারকের দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সেটা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই হোক। যখন সরকারি কর্মকর্তাদের নামে মামলা হয় বা অভিযোগ ওঠে, তখন তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে জমা দেওয়া তার সম্পদ বিবরণীতে বেলাল চৌধুরী ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সম্পদ দেখান। তবে অনুসন্ধানে তার নামে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়, অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ তিনি গোপন করেন। দুদকের এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, দায়দেনা বিবেচনায় নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বৈধ আয় হিসেবে পাওয়া যায় প্রায় ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বাস্তবে তার আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য উদ্ঘাটন করেছে দুদক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলায় জমি, ফ্ল্যাট, প্লট, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারসহ বিপুল সম্পদ তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। এজাহারে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুদকের নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে দেশে, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তা ছাড়া তিনি তার ভাইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ শেয়ারবাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কথা বলতে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের সেলফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তী সময়ে তার কাছে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।