Image description
এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ

সময়ের ক্যালকুলেটরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র তিন মাস। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম এজেন্ডায় রয়েছে এ নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই হিসেবে রাজনীতির মাঠ এখন অনেকটা নির্বাচনমুখী। আসনভিত্তিক সমাবেশ, গণসংযোগ শুরু করেছেন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ঠিক এমন মুহূর্তে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক, সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তাঁরা এখন নিজেদের সেফ এক্সিট বা নিরাপদ প্রস্থান নিয়ে ভাবছেন।’

নাহিদ ইসলামের এ মন্তব্যে মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে উত্তাপ। টেলিভিশনের টক শো ও সমাজমাধ্যমে শুরু হয় ব্যপক আলোচনা। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে নাহিদের মন্তব্য নিয়ে কথা বলছে। নানান আলোচনা হচ্ছে সরকারের ভিতরেও। আলোচনার পাশাপাশি অনেকে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের যুক্তি, নাহিদ ইসলাম একসময় ছিলেন সরকারের ভিতরের লোক। পরে সরকার থেকে বেরিয়ে এলেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে সরকারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তাঁর কাছ থেকে যখন এ ধরনের মন্তব্য আসে তখন সেটা নিঃসন্দেহে গুরুত্ব পায়।

সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরও বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তাঁরা নিজেদের সেইফ এক্সিটের কথা ভাবতেছেন। এটা আমাদের অনেক পোহাতে হচ্ছে এবং পোহাতে হবে। কিন্তু তাঁরা যদি এটা বিশ্বাস করতেন যে তাঁদের নিয়োগকর্তা ছিল গণ অভ্যুত্থানের শক্তি, রাজপথে নেমে জীবন দেওয়া ও আহত সাধারণ মানুষজন এবং তাঁরা যদি তাঁদের ওপর ভরসা করতেন, তাহলে উপদেষ্টাদের এ বিচ্যুতি হতো না।’ নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর গতকাল একই ইস্যুতে আরও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘কিছু উপদেষ্টার মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো, দেশে থাকুক আর দেশের বাইরেই থাকুক। এ দায়সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না। তাঁরা এত শহীদ, রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে ওখানে (সরকারে) আছেন। তাঁরা যদি এমনটা করে থাকেন, তাহলে দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না। যাঁরা এ ধরনের চিন্তা করেন তাঁদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাক বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের ধরবে।’

এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করা হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের তির ছোড়া হয়েছে। সরকারের ভূমিকায় অনেকটা হতাশ তাঁরা। তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সেইফ এক্সিটের কথা বলা হয়েছে বলে দলটি তাদের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারকে সমর্থন দেওয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার মন্তব্যে দারুণ বিরক্ত বলে জানান। তাদের মন্তব্য, কোনো কোনো উপদেষ্টা হয়তো ক্ষমতা আরও বেশিদিন উপভোগ করতে চান। এ কারণে কোনোভাবে নির্বাচন বানচাল করার পাঁয়তারা করছেন। পাশাপাশি নিজেরা সেইফ থাকার চেষ্টা করছেন। প্রায় একই সুরের ব্যাখ্যা পাওয়া গেল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারীর কাছ থেকেও। তাঁর মন্তব্য, ইউনূস সরকারের অনেক ভুল রয়েছে। এসব ভুলের কারণে চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের ফসল জনগণ পায়নি। এ কারণে নির্বাচনের আগে উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের কথা আসছে।

নাহিদ ইসলাম সেফ এক্সিট নিয়ে যেসব কথা বলেছেন সেসব জনগণের কথা বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব হচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু উনি সবচেয়ে বেশি বোকামি করেছেন অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের সরকারে যুক্ত করেননি। উনি সরকারে নিয়েছেন এনজিও ব্যক্তিত্বদের। বিশ্বব্যাংকের লোকদের। যারা সব সময় বিদেশিদের টাকায় নিজেদের আখের গোছান। পাশাপাশি তিনি আঞ্চলিক পর্যায়ের লোকদের গুরুত্ব দিয়েছেন। উনার মতো ব্যক্তির কাছে এটা কারও প্রত্যাশিত নয়।’

রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ কেন আলোচনায় সেইফ এক্সিট-এমন প্রশ্নে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের পরে এ সরকার গঠিত হয়েছে। সে হিসেবে এটা জনগণের সরকার। এ সরকারের যেভাবে কাজ করার দরকার ছিল, উপদেষ্টাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা নেওয়ার দরকার ছিল সেটা করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে সংস্কার, বিচার ও জনগণের কল্যাণকর কাজে। প্রধান উপদেষ্টা যখন নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলেন তখন দেখা গেল পুরো প্রশাসন স্থবির হয়ে গেল। উপদেষ্টারাও এক প্রকার নির্লিপ্ত হয়ে গেলেন। এ সরকারের প্রতি আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল তা তারা পূরণ করতে পারেনি।’

একই প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সেফ এক্সিট আলোচনার প্রথম কারণ মনে হয় উপদেষ্টাদের নানান অসংলগ্ন কথাবার্তা। আর এর প্যান্ডোরার বাক্স খুলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আমার ধারণা, নাহিদরা যেভাবে চেয়েছিলেন উপদেষ্টাদের একটা অংশ সেভাবে কাজ করেননি। প্রথম দিকে সরকারের সঙ্গে এনসিপির যে টিউনিংটা ছিল পরে তাতে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। চরিত্রের দিক থেকে এ সরকার একটা দলনিরপেক্ষ সরকার। এজন্য তাদের সবাইকে আমরা সমর্থন করছি। এ পরিস্থিতিতে সরকার একটা বা দুইটা দলকে সমর্থন করতে গিয়ে তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে।