Image description
সমালোচনার পর পদ গেল ইসফাকের

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতি হবার মধ্য দিয়ে নানান বিতর্ক, নাটকীয়তা ও সমালোচনা নিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নিরুত্তাপ, একতরফা, প্রহসনের নির্বাচন। ‘মেকিং’ এই নির্বাচনের ফল নিয়েও তাই জনমনে ছিল না তেমন কোনো কৌতূহল। তবে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতো ‘শেষ হইয়াও ইইলো না শেষ’র মতো বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনকে! কেননা নির্বাচিত ২৫ জনের মধ্যে এমন একজন পরিচালক হয়েছিলেন, যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আবেদনও করেছিলেন। সেটিও সরকারি কোটায়! অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা এনএসসি কোটায় নির্বাচিত হওয়া দুজনের একজন এম ইসফাক আহসান। যিনি বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসন মতলব (উত্তর-দক্ষিণ) থেকে মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই সিদ্ধান্ত বদলেছে এনএসসি। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার কারণে ইসফাক আহসানের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। খবরটি নিশ্চিত করে এনএসসির নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কালকে (গতকাল) সকালে আমরা নতুন পরিচালক দেব। তাঁকে ঘিরে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটির জন্যই আমরা তাঁকে সরিয়ে দিচ্ছি।’

তবে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগের সক্রিয় একজন কর্মী যিনি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্যও হয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হিসেবেও। সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচারেও ছিলেন সক্রিয়। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায় একাধিক পোস্ট পাওয়া গেছে। গত ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসনে নৌকা মার্কার পক্ষে প্রচার-প্রচারণার ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মায়া চৌধুরীর বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি। তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়নয়ে এমপি হয়েছিলেন। শাশুড়ি শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবের বন্দনা গাইতে দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার পেইজে। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত দল আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে চাওয়া এম ইসফাক আহসান কিভাবে বিসিবির নির্বাচনের সুযোগ পেল, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন।

ইসফাক বিসিবি নির্বাচনে পরিচালক হয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা এনএসসি কোটায়। যেটা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। যার প্রধান হলেন যুব ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি কীভাবে জুলাই গণহত্যা করা দল আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে বাছাই করলেন সে প্রশ্নও করছেন নেটিজেনরা। মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সদস্য এসএম মফিফুল ইসলাম সরকার তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নাবালক ও দুর্নীতিবাজ উপদেষ্টার চোখ ধাঁধানো সংস্কার।’ কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ সভাপতি ইসমাইল হোসেন সুমন লিখেছেন, ‘কত টাকার বিনিময়ে পদ দিলেন স্যার?’ মতলব উত্তর উপজেলা ছাত্রদলের নেতা তানজিল প্রধান লিখেছেন, ‘যেখানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার, যেখানে আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয় বিসিবির পরিচালক!!’
শোনা গেছে মোটা অর্থের বিনিময়ে ইসফাককে পরিচালক করেছেন এনএসসি কোটার প্রার্থী নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আগেও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় তাকে দেখা গেছে। সবশেষ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ইসফাকের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা বলেন আসিফ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভূমিকাও নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। নেটিজেনরা জানতে চাইছেন, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত দল আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য কি করে ক্রীড়া প্রশাসনের অংশ হতে পারেন? অনেকেই বলছেন, একটি স্বৈরাচারী দলের সক্রিয় কর্মী বা মনোনয়নপ্রত্যাশী কীভাবে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক পদে নির্বাচিত হতে পারেন? প্রশ্নটি রাখা হয়েছিল এনএসসির কাছেও। নিজেদের ভুল স্বীকার করে এনএসসির নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এতটা ডিটেইলস (খোঁজখবর) নিইনি। আসলে আমাদের ডিটেইলসটা নেওয়া উচিত ছিল।’

একানেই শেষ নয়। এখনও শোনা যাচ্ছে এনএসসি পরিচালক নির্বাচিত হওয়া আরেক ব্যবসায়ী ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিকও মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি (এনএসসি) কোটায় বিসিবি পরিচালক হয়েছেন! এমনিতেই এবারের বিসিবি নির্বাচন হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। তার আগে সরকারি হস্তক্ষেপে নির্বাচন ‘মেকানিজম’ কোনোভাবেই ভালো কিছু নয়। তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। প্রহসনের এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা বিভাগের পরিচালক পদে জামালপুর ক্রীড়া সংস্থার এই কাউন্সিলর এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান বলেন সেদিনই দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিসিবির এই ভোট থেকে জাতীয় নির্বাচনেও সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর শিক্ষা নেয়ার আছে। রেদুয়ান বলেন, ‘শুধু বিসিবিই নয়, এই ভোট থেকে জাতীয় নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকলেরই এমন মেকানিজম বন্ধে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’

এমন অবস্থায় দেশের ক্রিকেটের স্বাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্রীড়াবোদ্ধারা।