Image description

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নতুন দাম ঘোষণা অনুযায়ী—২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৭২৬ টাকায়। বুধবার (৮ অক্টোবর) থেকে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি প্রতি বিক্রি হবে ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রতি ভরিতে এক হাজার ৩৬৯ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন । এর আগে ৫ অক্টোবর ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা।

বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বগতি—দুই কারণেই খুচরা বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে স্বর্ণের ভরি । তবে এই দামের সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৬ শতাংশ মজুরি যোগ হওয়ায় ক্রেতাদের জন্য এক ভরি গয়না কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় সোয়া ২ লাখ টাকার মতো । যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এতে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন, বিপাকে পড়ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।

তিন বছরে ৮৩ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা

বাজুসের প্রকাশিত গত তিন বছরের দামের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে স্বর্ণের দাম বেড়ে চলেছে ক্রমান্বয়ে। ২০২২ সালের ২২ আগস্ট প্রতিভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ৮৩ হাজার ২৮০ টাকা, যা ছিল সে সময় পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার আগের দিন, ২১ আগস্ট দাম ছিল ৮২ হাজার ৫৬ টাকা। এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর বাজুস নতুন মূল্য তালিকা দেয়—সেখানে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরির দাম বেঁধে দেওয়া হয় ৮৪ হাজার ২১৪ টাকা।

দেশের বাজারে প্রভাব

বাংলাদেশে ২০০০ সালে ২২ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল মাত্র ৬,৯০০ টাকা। ২০১০ সালে তা দাঁড়ায় ৪২,১৬৫ টাকা, ২০২০ সালে প্রায় ৭০,০০০ টাকা, এবং ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো এক লাখ টাকা অতিক্রম করে। চলতি বছরের শুরুতে দাম ছিল দেড় লাখ, এখন ২ লাখ টাকার বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।

বাজুসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ দামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বৈশ্বিক বাজারের ওপর। আন্তর্জাতিক চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ মজুতের ধারা বিবেচনায় এ ধরনের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়।’ তিনি বলেন, “সোনার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিক্রি কমায় কারিগররা বেকার হয়ে পড়ছেন।”

বিলাসপণ্য হয়ে যাচ্ছে স্বর্ণ

বাজারে এখন এমন অবস্থা— মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য স্বর্ণ কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক সময় বিয়ে, উৎসব কিংবা সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ কেনা হতো। এখন তা বিলাসপণ্যে পরিণত হয়েছে। ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার এক জুয়েলার্স মালিক বলেন, “আগে দিনে দিনে গ্রাহকরা দোকানে আসতেন গয়না বানাতে। এখন অনেকে শুধু দেখতে আসেন। ক্রেতা কমে গেছে, কিন্তু দাম বাড়ছেই।” পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে প্রায় পাঁচ দশক ধরে স্বর্ণ ব্যবসা করছেন গোবিন্দ হালদার। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার আগে গিনি স্বর্ণের দাম ছিল ভরি দেড়শত টাকা। তখনও মানুষের অভিযোগ ছিল, দাম নাগালের বাইরে। এখন তো অবস্থা আরও কঠিন।’’

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের গুলশান শাখার ইনচার্জ সাগর সরকার জানান, সাধারণত দামের ঊর্ধ্বগতি বিক্রি বাড়ায়, কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতাই আর স্বর্ণ কেনার সামর্থ্য রাখছেন না।

এদিকে সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে বুলিয়নভল্ট ডটকম এবং গোল্ডপ্রাইস ডটকম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সোমবার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে এক আউন্স স্বর্ণ তিন হাজার ৯৪৮ থেকে তিন হাজার ৯৬৬ ডলার দামে কেনাবেচা হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এই দাম এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ক্রমাগত দাম বাড়ছে স্বর্ণের। তখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দর ছিল এক হাজার ৬৫১ ডলার। বৈশ্বিক আর্থিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এবং বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাই স্বর্ণের এই দাম বাড়ার মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২৩ সালে লাখ টাকার মাইলফলক

২০২৩ সালের শুরুতেই বাংলাদেশে সোনার দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি বাজুস নতুন দাম নির্ধারণ করে—২২ ক্যারেট প্রতি ভরি ৯০ হাজার ৭৪৬ টাকা। একই বছরের জুনে দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা (২২ ক্যারেট)। এর মাত্র এক মাস পর জুলাইয়ে স্বর্ণের দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লাখ টাকা ছাড়ায়। ২১ জুলাই থেকে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭৭৭ টাকা। এ সময় ২১ ক্যারেটের দাম হয় ৯৬ হাজার ২২৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৮২ হাজার ৪৬৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির ৬৮ হাজার ৭০১ টাকা।

অর্থনীতিবিদরা তখনই সতর্ক করেছিলেন—স্বর্ণের এই ঊর্ধ্বগতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা দেশের আমদানি ব্যালেন্স, বিনিয়োগ এবং ভোক্তা বাজারে প্রভাব ফেলবে।

২০২৪: লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে দাম

২০২৪ সালে দেশে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল—তার মধ্যে ৩৫ বার দাম বেড়েছে আর ২৭ বার কমেছে। বছরের শুরুতেই (১৮ জানুয়ারি) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪০ টাকা।

একই সময় ২১ ক্যারেটের দাম ১ লাখ ৭ হাজার ৩০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৯২ হাজার ২৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির দাম ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে ওই বছরের শেষ দিকে (১২ ডিসেম্বর) দাম হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে—২২ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হয় ১ লাখ ৪০ হাজার ২৭১ টাকায়। ২১ ক্যারেটের দাম হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির ৯৪ হাজার ২৫৭ টাকা।

২০২৫ সালে দুই লাখের যুগে প্রবেশ

২০২৫ সালের শুরুতেই নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি বিক্রি হয় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকায়, যা সে সময় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তারপরও বাজার থেমে থাকেনি। অক্টোবর মাসে এসে এক লাফে দাম দুই লাখ টাকাও অতিক্রম করে। ৭ অক্টোবর থেকে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতিভরি বিক্রি হয় ২ লাখ ৭২৬ টাকায়, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকা।

দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ

বাজার বিশ্লেষক ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মতে, একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে স্বর্ণের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন অর্থনীতির মন্দাভাবের আশঙ্কা। এসব বিষয় বিনিয়োগকারীদের ‘সেফ হেভেন’ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ২,৬০০ ডলার ছুঁয়ে যায়।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন: বাংলাদেশে ডলারের সংকট এবং টাকার মান হ্রাসের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারে স্বর্ণ আমদানির খরচও বেড়েছে।

আমদানি সীমাবদ্ধতা ও চোরাচালান: বৈধ আমদানিতে জটিলতা থাকায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা বেশি হলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বাড়ছে।

উৎসব ও বিয়ের মৌসুমের চাহিদা: প্রতি বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়টিতে দেশে বিয়ের মৌসুমে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে। এ বছর সেই মৌসুমে দাম বাড়ার ফলে বাজারে অতিরিক্ত চাপ পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী স্বর্ণভাণ্ডারের ঊর্ধ্বগতিও বাজারে দামের দ্রুত বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক সরকারি স্বর্ণ মজুত বর্তমানে ৩৬,৭০০ টন ছাড়িয়েছে—যা মোট বৈদেশিক রিজার্ভের প্রায় ২৭ শতাংশ। ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এক বছরে ১,১৮০ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা ১৯৬৭ সালের পর সর্বোচ্চ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঋণ ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, সুদের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ডলারের স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ‘অরাজনৈতিক’ ও নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নিচ্ছেন।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পর থেকে ডলারের হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বর্তমানে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪ টন, যার মূল্য ২৩৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ, গহনার জন্য ৩৩ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ২০ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতে ৭ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশে স্বর্ণের প্রকৃত মজুতের কোনও সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব নেই। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, “ভারতে সাধারণ মানুষের হাতে কত টন স্বর্ণ আছে—সে বিষয়ে সরকারি হিসাব রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যক্তিপর্যায়ে স্বর্ণ মজুতের কোনও তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নেই।”

অপরদিকে, ডলারের দাম বাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা— এসব কারণে বৈশ্বিক বাজারে দাম আরও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়েও বাজারে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছে বাজুস।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণ এখনও সাধারণ মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় নয়। অনেকেই মনে করেন, দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তবে বাজুস কর্মকর্তাদের মতে, আর্থিক জ্ঞানের অভাবও বড় কারণ।

মাসুদুর রহমান বলেন, “পুঁজিবাজারে লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকি জেনেও বিনিয়োগ করছে। অথচ স্বর্ণে বিনিয়োগে লোকসান হয়েছে—এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া বিরল। সাজসজ্জার বাইরে স্বর্ণকে যদি বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়, তবে দাম যতই বাড়ুক চাহিদা কমবে না।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা নিরসন এবং সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিলে দেশের বাজারেও এর প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ফলে বৈশ্বিক বাজারের মতো দেশীয় বাজারেও চাহিদা টিকে থাকবে।

রুপার স্থিতিশীলতা

যেখানে স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী, সেখানে রুপার বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। তিন বছরে রুপার দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, তবে তা এখনও সাধারণ মানুষের নাগালে। ২০২২ সালে ২২ ক্যারেট রুপার দাম ছিল ১,৫১৬ টাকা, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৬২৮ টাকায়।

বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা

বিশ্ব অর্থনীতি যখন অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত, শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নতুন শুল্ক বাড়ছে, আর সরকারি ঋণ তীব্র চাপ তৈরি করছে—তখন স্বর্ণ আবারও হয়ে উঠছে নিরাপদ আশ্রয়। ইতিহাসে বারবার যেমন দেখা গেছে—১৯৩০ সালের মন্দা, ১৯৭০ সালে ব্রেটন উডস ভাঙন কিংবা ২০০৮ সালের বৈশ্বিক সংকট—প্রতিবারই স্বর্ণে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন আর স্বর্ণ কিনছে না শুধু দামের কারণে, বরং বিকল্প সম্পদগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে।”

সামনে কী অপেক্ষা করছে?

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম যদি আরও বাড়ে, তবে বাংলাদেশের খুচরা বাজারেও এর প্রতিফলন পড়বে। তবে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এবং আমদানি জটিলতা কমলে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “স্বর্ণ এখন শুধু অলংকার নয়, এটি বিনিয়োগ সম্পদেও পরিণত হয়েছে। বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লেই স্বর্ণের দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়বে, এটা বৈশ্বিক প্রবণতা।”

উল্লেখ্য, ২০২২ থেকে ২০২৫—এই তিন বছরে বাংলাদেশের স্বর্ণবাজার যেন এক অবিশ্বাস্য উত্থানের সাক্ষী। বিশ্ববাজারের প্রভাব, ডলারের সংকট, স্থানীয় চাহিদা এবং বিনিয়োগের প্রবণতা—সব মিলিয়ে স্বর্ণ এখন কেবল অলংকার নয়, বরং নিরাপদ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার প্রতীক।

তবে এরইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, স্বর্ণ কি এখন কেবল ধনীদের হাতের সম্পদ হয়ে উঠছে?