
সিলেটের ‘তিন ইস্যুতে’ তত্ত্ব্বাধবায়ক সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ার-পারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। আন্দোলনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতেও তিনি সিলেটবাসীকে আহ্বান জানালেন। বলেছেন; উন্নয়নে সিলেটবাসীর সঙ্গে একের পর এক বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। যদি সরকার এখন থেকে সিলেটের প্রতি নজর না দেন তাহলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামবেন। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত সিলেট। বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের তিন মাধ্যমেরই অবস্থা নাজুক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখন সিলেটবাসীর গলার কাঁটা। ২০২২ সালে শুরু হয়েছিল ছয় লেন সড়কের কাজ। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সড়কের কাজ শেষ হয়েছে ১৫ ভাগ। সরকারের উপদেষ্টাদের তরফ থেকে ইতিমধ্যে প্রকল্প কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে।
এসব বৈঠকে পর্যালোচনার পরও জানা গেছে; শুধু মাত্র ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ঢাকা-সিলেট রুটের কাজ আটকে গেছে। এখন কয়েকটি স্থান কাজ চলছে। কিন্তু সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই। কাদা মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে যানবাহন। যানজটও নিত্যসঙ্গী। ঢাকা থেকে সিলেট থেকে এখন সময় লাগছে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। সড়কের অবস্থা খারাপ থাকার কারণে প্রায় সময় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল থেকে বিরত থাকে। এই অবস্থায় সিলেটের সাধারণ মানুষ জরুরি কাজে ঢাকা যেতে হলে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে ১৪ ঘণ্টাই যেতে হয়। ঢাকা-সিলেট রুটের করুণ অবস্থার কারণে চাপ বেড়েছে রেলপথে। এ পথেও টিকিট মিলে না। স্ট্যান্ডিং টিকিট করে অনেকেই দাঁড়িয়ে রেলপথে ঢাকা-থেকে সিলেট যাতায়াত করেন। ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় থাকে বেশি। অতিরিক্ত চাপের কারণে রেলপথে টিকিট হয়ে পড়েছে সোনার হরিণ। ঢাকা-সিলেট রেলপথের মধ্যে সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ। বৃটিশ আমলে তৈরি এই রেলপথে ট্রেন চলে ধীরগতিতে। দুঘর্টনাও বাড়ছে।
গতকাল ভোরে চট্টগ্রাম থেকে আসা উদয়ন ট্রেনটি মোগলাবাজারে দুঘর্টনার শিকার হয়। এ কারণে সিলেটে আটকা পড়া কালীন এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সিলেট ছাড়ে। অনেক জায়গা থেকেই দাবি তোলা হচ্ছে সিলেট-আখাউড়া ডাবল লাইন রেলপথের। কিন্তু বিগত সরকার সিলেটবাসীর এ দাবিকে তোয়াক্কাই করেনি। সড়ক পথ বেহালদশার কারণে অনেকেই আকাশপথ ব্যবহার করছেন। কিন্তু গেলো কয়েক মাস ধরে আকাশ পথে টিকিট মিলে না। যদি মিলে সেই টিকিটের দামও উচ্চ মূল্য। এখন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ওয়ানওয়ে টিকিট কিনতে হয়। চাপ বেশি থাকায় তাৎক্ষণিক টিকিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সিলেট নগরীর মেজরটিলা ইসলামপুরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি স্থানীয় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের কাছে ৩১ দফার দাওয়াত পৌঁছে দেন। এসময় তিনি সিলেটবাসীর এই তিন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। দিয়েছেন আন্দোলনের হুমকিও। আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরে সিলেটের বড় কোনো উন্নয়ন হয়নি। যদি উন্নয়ন হতো তাহলে সিলেট এত পিছিয়ে থাকতো না। আজ সিলেটের মানুষকে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হতো না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সড়ক পথের অবস্থা নাজুক, ট্রেনের টিকিট মিলে না। আর আকাশ পথে ভাড়া উচ্চ মূল্য। যেটি রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সিলেটের মানুষ হাঁসফাঁস করছেন। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সিলেটের কোনো প্রতিনিধি নেই। এ জন্য সিলেটের উন্নয়নের দিকে নজর নেই কারও। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের দিকে তাকালে বুঝা যায় সিলেট কতোখানি পিছিয়ে রয়েছে। এটা সিলেটের সঙ্গে বিমাতা সুলভ আচরণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাবেক এই মেয়র অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবির মধ্যে রয়েছে; ঢাকা- সিলেট মহাসড়ককে নতুন করে বর্ধিত অংশের যে কাজ চলছে সেটি চলমান রাখা হোক। আর পূর্বের যে সড়কটি রয়েছে সেটি মেরামত করে দ্রুতই যান চলাচলের উপযোগী করা হোক। নতুবা দিন দিন এ সংকট আরও তীব্র হবে।
ঢাকা-সিলেট রেলপথে চাপ বাড়ার কারণে একটি পূর্ণাঙ্গ রেলগাড়ি বেশি বগি দিয়ে চালু করার দাবি তোলেন তিনি। আর যতদিন পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ না হবে ততোদিন পর্যন্ত অতিরিক্ত এই ট্রেন সার্ভিস চালু রাখার আব্দার করেন। আর আকাশ পথে উড়োজাহাজ ভাড়া দ্রুতই কমিয়ে আনারও দাবি তার। বলেন, কয়েক মাস আগেও সিলেটের মানুষ আকাশপথে ঢাকা-সিলেট রুটে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এখন এই টিকিটের মূল্য ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। স্বল্পযাত্রার আন্তর্জাতিক রুটেও এত ভাড়া নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সন্ধ্যায় আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটবাসী পদে পদে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই এখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সিলেটের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এ সরকারের সব উন্নয়নও অন্যান্য জায়গায় হচ্ছে। যদি সিলেটের মানুষের এসব দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে না মানা হয় তাহলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আন্দোলনে নামবেন বলে জানান।