Image description
র্যাব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব, ধনঞ্জয় ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএসের বিরুদ্ধে, ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ

পাঁচ বছর আগে গুমের অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবার একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছে। গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সুপারিশে ভিকটিম পরিবার এ মামলা করেছে বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজার ৃসদর মডেল থানায় আবদুল হাকিম বাদী হয়ে মির্জা মোহাম্মদ জানে আলম ও নাছরিন আক্তার নামে দুই জনকে প্রধান আসামি করে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বাদী তার ছেলে হাবিব উল্লাহকে (২৮) অপহরণ করে গুমের অভিযোগ এনেছেন।

মামলার বাদী আবদুল হাকিম বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গঠিত গুম কমিশনে তার ছেলে গুম হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়। গুম কমিশনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকায় তার ছেলে হাবিব উল্লাহর নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে গুম কমিশন থেকে এ ব্যাপারে তাদের মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ২৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তিনি দণ্ডবিধি ৩৬৪/৩৮৫/৩৮৬ ও ৩৪ মতে মামলা দায়ের করেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছিলেন গুমের শিকার হওয়ার পর এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩০। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এদের মধ্যে হাবিব উল্লাহর নাম ১৬২ নম্বরে রয়েছে। গুমের শিকার এই ৩৩০ জনের মধ্যে হাবিব উল্লাহর ব্যাপারে গুম কমিশন নতুন করে মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছে।

যেভাবে গুম করা হয় 

গুম হওয়া হাবিব উল্লাহ সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন। সৌদি আরবে তার বাবা ও চাচার একটি পোশাকের দোকান রয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে হাবিব উল্লাহ দেশে আসেন। কক্সবাজার সদর থানার বদর মোকাম এলাকায় তাদের বাড়ি। ঐ বছরের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় হাবিব উল্লাহ চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কে বা কারা তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে ২ অক্টোবর নিখোঁজের বাবা আব্দুল হাকিম কক্সবাজার সদর থানায় একটি জিডি করেন। জিডি দায়েরের পরদিন অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি আবদুল হাকিমের কাছে ফোন করে জানায়, তার ছেলে তাদের কাছে আছে। ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাত ঐ ব্যক্তি। ঐ সময় অপহরণকারীরা ভিকটিমকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল বলে ফোনে জানায়। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা করে পাঁচটি নম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন হাকিম। এরপর থেকে মুক্তিপণ দাবি করা মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পান তারা।

এ ব্যাপারে ভিকটিমের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ ছফা বলেন, ‘হাবিবকে ঘটনার দিন র্যাবের গাড়িতে করে উঠিয়ে নেওয়া হয়। চকোরিয়ায় র্যাবের ক্যাম্প অফিসে আটকে রাখা হয় বলে আমরা জানতে পারি। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার আট নম্বর ওয়ার্ডের ইছানগর এলাকার মির্জা বাড়ির মির্জা মোহাম্মদ জানে আলমের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে এ অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) সোহেলও এ গুমের পেছনে জড়িত। ঐ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখার উপসচিব ধনঞ্জয় সরকারের সঙ্গে মির্জা মোহাম্মদ জানে আলমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মির্জা মোহাম্মদ জানে আলম চট্টগ্রামের একজন জাহাজ ব্যবসায়ী।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আমি র্যাবের কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বলা হয়েছিল, তাদের কাছে হাবিব উল্লাহ আটক আছে। সে তখনো জীবিত ছিল। বলা হয়েছিল, আপনারা বেশি ঘাঁটাঘাটি করবেন না। কয়েক দিন পরই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কয়েক মাস অপেক্ষার পরও হাবিব আর ফিরে আসেনি।’

গতকাল ভিকটিমের বাবা আবদুল হাকিম বলেন, ‘ছেলের সন্ধানে তিনি কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারেন যে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকার মির্জা মোহাম্মদ জানে আলম ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার তার ছেলেকে অপহরণ করেছে।’ নাসরিন আক্তারের সঙ্গে তার ছেলের মোবাইল ফোনে অনেক বার কথোপকথন হয়েছে। এর জেরে তারা তার ছেলেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গুম করেছে—এমন অভিযোগ এনে তিনি ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জানে আলম ও তার স্ত্রী নাসরিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে পিবিআই মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

বাদী আবদুল হাকিম বলেন, ‘আসামিরা আমার ছেলেকে কোথায় বা কীভাবে রেখেছে, সে জীবিত রয়েছে না কি মৃত—কিছুই আমি জানি না। কিন্তু আজও আমি ছেলের অপেক্ষায় আছি।’